আগরতলা, ১০ নভেম্বর:
উন্নয়নের আলো আজও যেন পৌঁছয়নি পাহাড়ের কোলে থাকা কাঁকড়াছড়া এডিসি ভিলেজের হাজরাবাড়ি পাড়ায়। মুঙ্গিয়াকামী আরডি ব্লকের এই প্রত্যন্ত জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামের মানুষদের জীবনে প্রতিদিনই এক নতুন সংগ্রাম। আদিকাল থেকে তারা জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে এনে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে রান্না করেন। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস কানেকশন তাদের ঘরে পৌঁছেছে ঠিকই, কিন্তু সেই সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার টাকা আজও নাগালের বাইরে।
এক জনজাতির গলায় বিষণ্ণতা —“গ্যাস পাইছি, কিন্তু গ্যাস ভরার পয়সা কই? তাই আবার জঙ্গলে যাই, কাঠ কুড়িয়ে আনি, ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে যায়, কিন্তু উপায় নাই।”এই কথাতেই লুকিয়ে আছে উন্নয়নের এক নির্মম বাস্তবতা — যেখানে সরকারি প্রকল্পের নাম আছে, কিন্তু সুফল নেই। হাজরাবাড়ির জনজাতি মানুষদের জীবনে উজ্জ্বলার আলো এখনো নিভু নিভু।
এলাকার মানুষদের ক্ষোভ, এডিসি প্রশাসন সম্পূর্ণ উদাসীন। ক্ষমতাসীন তিপ্রা মথা সরকারের অধীনে থেকেও তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। গ্রামবাসীদের দাবি, “মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মাকে এলাকায় এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে, খোঁজখবর নিতে দেখেছি। কিন্তু তিপ্রা মথার নির্বাচিত প্রতিনিধি ইএম কমল কলই প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলেও, কখনো থেমে আমাদের দুঃখ-কষ্ট শোনেন না।”এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা পানীয় জলের অভাব।
গ্রামে কোনো নলজল প্রকল্প নেই, ফলে প্রতিদিনই মেয়েরা ও বৃদ্ধারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে পাহাড়ের চূড়া থেকে জল টেনে আনেন। সেই জলই পান ও রান্নার একমাত্র ভরসা। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় চুষা সেই জলও শুকিয়ে গেলে দেখা দেয় তীব্র জলসংকট।এই গ্রামে আজও বিদ্যুৎ অনিয়মিত, চিকিৎসার ব্যবস্থা সীমিত, শিক্ষার পরিকাঠামো দুর্বল। তবুও এই মানুষগুলো হাসি মুখে বেঁচে থাকেন পাহাড়, বন আর কষ্টের সঙ্গে মিশে।
উজ্জ্বলা যোজনার প্রতিশ্রুতি তাদের ঘরে পৌঁছালেও, ‘উন্নয়নের আগুন’ আজও জ্বলেনি তাদের রান্নাঘরে। হাজরাবাড়ি যেন গোটা তেলিয়ামুড়া মহকুমার প্রতীক — যেখানে উন্নয়নের ঘোষণাপত্র আছে, কিন্তু বাস্তব নেই।হাজরাবাড়ির এক বৃদ্ধ জনজাতি নাগরিকের কণ্ঠে গভীর আক্ষেপ —“আমরা তো কেবল শুনি, সরকার উন্নয়ন করছে। কিন্তু পাহাড়ে সেই উন্নয়নের হাওয়া এখনো লাগে নাই।”এই এক বাক্যেই যেন উঠে আসে পাহাড়ি জনজীবনের চিরন্তন হাহাকার — উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু বাস্তবতার আগুন নেই।

