মুম্বই, ২ নভেম্বর: ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে আজকের দিনটি সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। প্রথমবারের মতো মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতল ভারত। বৃষ্টিভেজা নবি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ফাইনালে দীপ্তি শর্মার বিধ্বংসী বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আতশবাজির আলোয় ঝলমল করে ওঠে মুম্বইয়ের আকাশ, আর গ্যালারি জুড়ে ভারত, ভারত স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম।
দিনের শুরুটা ছিল মেঘলা আর আর্দ্রতাপূর্ণ। সেই আবহাওয়া বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্ট টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। ম্যাচের আগে তিনি বলেন, “উইকেট দারুণ দেখাচ্ছে, তাই চেজ করাটা সুবিধাজনক হবে মনে করছি। বৃষ্টির কারণে বাতাসে কিছুটা মুভমেন্ট থাকবে, যা আমাদের পেসারদের কাজে লাগবে।”
অন্যদিকে, ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর জানান, তিনিও টস জিতলে আগে বল করতেন। “আবহাওয়া মেঘলা, কিন্তু আমরা ব্যাট হাতে আত্মবিশ্বাসী। আমাদের ছন্দ ফিরে এসেছে, আশা করছি বড় রান তুলতে পারব,” বলেন হরমনপ্রীত।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমেও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন দুই ভারতীয় ওপেনার শেফালি ভার্মা ও স্মৃতি মান্ধানা। দু’জনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভারেই স্কোরবোর্ড ছুঁয়ে ফেলে ৭০ রান। এরপর ১০৪ রানের দারুণ উদ্বোধনী জুটি গড়ে ভারতকে শক্ত ভিত দেয় এই দুই তারকা ব্যাটার।
শেফালি ভার্মা খেলেন তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস — ৭৮ বলে ৮৭ রান, যার মধ্যে ছিল ১২টি চার ও ২টি ছয়। অন্যদিকে, স্মৃতি মান্ধানা ৫৩ রান করে আউট হন আয়াবোঙ্গা খাকার বলে। এরপর জেমিমা রদ্রিগেজ দ্রুত আউট হলেও, অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর (৪৬) ও দীপ্তি শর্মা (৪১) ইনিংস সামলে নেন। শেষদিকে ঋচা ঘোষ (২৪) ও অমনজোত কৌর (১৯*) দ্রুত রান তুলে ভারতের ইনিংসকে ২৯৮/৭ রানে পৌঁছে দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন ননকুলুলেকো ম্লাবা, যিনি দুই উইকেট নেন।
২৯৯ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করে। লরা উলভার্ট (৫৬) ও তাজমিন ব্রিটস (৪১) প্রথম উইকেটে ৫১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু ভারতের তরুণ অলরাউন্ডার অমনজোত কৌর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রান আউট করেন ব্রিটসকে, যা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর দীপ্তি শর্মা আক্রমণে এসে ধীরে ধীরে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে দেন। তার নিখুঁত লাইন ও লেংথে একে একে সাজঘরে ফেরেন সুনে লুস, ক্লোই ট্রায়ন, মারিজানে ক্যাপ ও শেষে নাদিন ডি ক্লার্ক। দীপ্তি শর্মা তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার — ৫ উইকেট।
শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। ম্যাচ জিতে ভারত ৫২ রানে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করে।
এই জয় ভারতের মহিলা ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। দীর্ঘদিন ধরে পুরুষ ক্রিকেটে যে আধিপত্য তৈরি হয়েছে, এবার নারী ক্রিকেটও সেই গৌরবে যোগ দিল। ২০০৫ ও ২০১৭ সালের ব্যর্থতার পর ২০২৫ সালে এসে পূর্ণতা পেল সেই স্বপ্ন।
মুম্বইয়ের আকাশে আতশবাজি, মাঠে জাতীয় পতাকা ও খেলোয়াড়দের চোখে অশ্রু— সব মিলিয়ে এ যেন এক আবেগঘন ঐতিহাসিক রাত। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে এই জয় হয়ে থাকবে অনন্য গৌরবের প্রতীক।

