‘মেকি একতা দিবস’ উদ্‌যাপনকে কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা, বিজেপি-আরএসএস-এর বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ

আগরতলা, ১ নভেম্বর: স্বাধীনোত্তর ভারতের ঐক্য, অখণ্ডতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল ভিত্তিকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই আরএসএস ও বিজেপি ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে এমনই অভিযোগ তুলেছে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস। শনিবার দলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির হত্যাকাণ্ড ছিল আরএসএসের দেশবিরোধী চক্রান্তের ফল। আর আজ সেই আরএসএস ও বিজেপি ‘স্বচ্ছতা’ ও ‘একতা’র নামে গান্ধিজির নাম ব্যবহার করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

বিবৃতিতে প্রদেশ কংগ্রেস দাবি করে, দেশের প্রকৃত ঐক্যের প্রতীক ছিলেন মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহেরু ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। আজ মোদি সরকার তাঁদের আদর্শকে বিকৃত করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। সর্দার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কোটি কোটি টাকা সরকারি অর্থে তথাকথিত ‘একতা দিবস’ পালন হচ্ছে, যা আসলে কংগ্রেস ও তার নেতাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা খাটো করার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত।

কংগ্রেসের দাবি, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যখন গোটা দেশ জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল, তখন আরএসএস, হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের সহায়তা করেছিল। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আরএসএস প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের প্রস্তাব তারা ব্রিটিশ সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল, যা পরে মুসলিম লিগের দাবির সাথেই মিলে যায়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের স্বাধীনতা অর্জন, সংবিধান রচনা ও প্রদেশগুলিকে যুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠনে নেহেরু, প্যাটেল ও আম্বেদকর যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটিই আজ আরএসএস-বিজেপি বিকৃত করছে। সর্দার প্যাটেলের একতা প্রতিষ্ঠার ভূমিকার কারণেই তিনি ‘লৌহমানব’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, আরএসএস-র সন্ত্রাসবাদী সেবক নাথুরাম গডসে দ্বারা মহাত্মা গান্ধিকে হত্যা করানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় গোটা দেশ হতবাক হয়ে পড়েছিল। তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলও গভীরভাবে মুষড়ে পড়েছিলেন। নেহেরু-প্যাটেলের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বেই দেশ সেই কঠিন সময় অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগ, বর্তমান শাসকরা দেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনকে দুর্নীতিতে জর্জরিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব দুর্নীতি সূচকে ভারত ১৯৬তম স্থানে নেমে এসেছে, অথচ বিজেপি নেতাদের মধ্যে লজ্জার লেশমাত্র নেই। তারা ধর্মীয় মেরুকরণ ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করছে।

শেষে প্রদেশ কংগ্রেসের আহ্বান, দেশের প্রকৃত ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনা রক্ষায় রাজ্যবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তথাকথিত ‘একতা দিবস’-এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা উগ্র ধর্মীয় ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।