বিহার নির্বাচনের আগে মহাগঠবন্ধন প্রস্তুত, কিন্তু দুর্বল কড়ি হিসেবে দেখা হচ্ছে কংগ্রেসকে

পাটনা, ৩০ অক্টোবর : বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু হয়েছে। বিরোধী জোট মহাগঠবন্ধন — যেখানে রয়েছে আরজেডি, কংগ্রেস, ভিআইপি ও বামদল — ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে নামলেও, জোটের ভেতরে অস্থিরতার ইঙ্গিত মিলছে। বিশেষ করে, কংগ্রেসকে এই জোটের “দুর্বল কড়ি” হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, কিন্তু জয় পেয়েছিল মাত্র ১৯টিতে — সফলতার হার প্রায় ২৭ শতাংশ। এটি মহাগঠবন্ধনের অন্তর্গত সব দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম। সেই ব্যর্থতাই আজও তেজস্বী ও লালু যাদবের শিবিরে উদ্বেগের কারণ।

আরজেডি আশঙ্কা করছে, কংগ্রেসের হাতে থাকা আসনগুলির অনেকগুলি আসলে জয়যোগ্য হলেও, দুর্বল প্রার্থী বাছাই ও সংগঠনের অভাবে সেই আসনগুলি ফের হারিয়ে যেতে পারে।

এই নির্বাচনে কংগ্রেস ৬১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, যার মধ্যে ৫৬টিতেই বিজেপি ও জেডিইউ-র বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই হবে — অর্থাৎ এনডিএ-র শক্ত ঘাঁটিতে। এই আসনগুলোয় জয় পেতে কংগ্রেসকে করতে হবে প্রবল পরিশ্রম। প্রায় পাঁচ-ছয়টি আসনে কংগ্রেস, আরজেডি ও বাম দল যৌথভাবে এনডিএ-র মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে, কংগ্রেসের পারফরম্যান্স এখানেই নির্ধারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ শক্তি।

ঐতিহাসিকভাবে, বিহারে কংগ্রেসের পারফরম্যান্স বহু বছর ধরেই দুর্বল। ১৯৯৫ সালের পর থেকে তারা কখনও ৩০টির বেশি আসন জিততে পারেনি। ২০০৫ সালে তারা পেয়েছিল মাত্র ৯টি, আর ২০১০ সালে মাত্র ৪টি আসন।

এই দীর্ঘমেয়াদি ব্যর্থতা এখন মহাগঠবন্ধনের সামগ্রিক ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে কংগ্রেস বিভিন্ন প্রচেষ্টা নিয়েছে — রাজ্যে শীর্ষ নেতৃত্বের সফর, তরুণ ভোটারদের লক্ষ্য করে প্রতিশ্রুতি, এবং পুরনো কর্মীদের সক্রিয় করার প্রচেষ্টা। কিন্তু সব মিলিয়ে ফলাফল হয়েছে “ঢাকের তিন পাট”, অর্থাৎ প্রত্যাশার তুলনায় ফলহীন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের প্রধান সমস্যাই হল কার্যকর স্থানীয় নেতৃত্বের অভাব। বর্তমানে দলটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সভাপতির উপর নির্ভরশীল, কারণ জেলার অধিকাংশ ইউনিট নিষ্ক্রিয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল— আরজেডির উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের স্বাধীন সংগঠন শক্ত করা এবং বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকর বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা।