‘সনাতনীদের থেকে দূরে থাকুন’: আরএসএস-বিরোধী মন্তব্যে বিতর্কে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া

মাইসুরু, ১৯ অক্টোবর : কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া শনিবার ‘সনাতনী’দের সংস্পর্শ এড়াতে এবং আরএসএস ও সংঘ পরিবার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর দাবি, এরা ঐতিহাসিকভাবে ড. বি. আর. আম্বেদকর ও তাঁর প্রণীত ভারতীয় সংবিধানের বিরোধিতা করে এসেছে।

মাইসুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তী উৎসব ও নতুন ‘জ্ঞান দর্শন’ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সঠিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন। যারা সমাজের পক্ষে দাঁড়ায়, তাদের সঙ্গে থাকুন—তাদের সঙ্গে নয় যারা সামাজিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করে বা যারা সনাতনী।”

সম্প্রতি ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের দিকে জুতো ছোড়ার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে সিদ্দারামাইয়া বলেন, “একজন সনাতনী প্রধান বিচারপতির দিকে জুতো ছুঁড়েছে—এটি প্রমাণ করে সমাজে এখনও গোঁড়া মানসিকতা টিকে রয়েছে। এই কাজের নিন্দা শুধু দলিতরা নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের করা উচিত। তবেই বলা যাবে সমাজ পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে।”

তিনি আরএসএস ও সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা আম্বেদকরের সংবিধানের বিরোধিতা করেছিল এবং এখনও করছে। তাই জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

আম্বেদকরকে একজন দূরদর্শী সমাজ সংস্কারক বলে বর্ণনা করে সিদ্দারামাইয়া বলেন, “আম্বেদকর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন সমাজকে বোঝার জন্য এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করেছিলেন সমাজ পরিবর্তনের জন্য।” তিনি বিজেপি ও সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে আম্বেদকরের নামে মিথ্যা প্রচার চালানোর অভিযোগ তুলে বলেন, “ওরা বলে কংগ্রেস আম্বেদকরকে নির্বাচনে হারিয়েছিল। কিন্তু আম্বেদকর নিজেই লিখেছেন—‘আমাকে হারিয়েছেন সাভারকর ও ডাঙ্গে।’ এই সত্যগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরতে হবে যাতে সংঘ পরিবারের মিথ্যাচার উন্মোচিত হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমি আম্বেদকর স্কুল অফ ইকোনমিক্স প্রতিষ্ঠা করেছি যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর আদর্শে চলতে পারে। আম্বেদকরের তুলনা হয় না। আরেকজন আম্বেদকর জন্মাবেন না, কিন্তু আমরা সবাই তাঁর পথ অনুসরণ করতে পারি।”

সংবিধান রচনায় আম্বেদকরের অবদানের কথা স্মরণ করে সিদ্দারামাইয়া বলেন, “বিশ্বের সব সংবিধান অধ্যয়ন করে তিনি ভারতের জন্য একটি উপযুক্ত সংবিধান উপহার দিয়েছেন।” তিনি বুদ্ধ, বসবা ও আম্বেদকরের চিন্তাধারায় বিশ্বাসী বলেও জানান। “তাই আমি আশা করি সমাজে যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক মনোভাব বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞান পড়ে অন্ধ বিশ্বাসে চলা ঠিক নয়।”

মুখ্যমন্ত্রী মাইসুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্বেদকর স্টাডি সেন্টারের ২৫ বছর পূর্তি এবং নতুন ‘বিশ্ব জ্ঞানী আম্বেদকর সভা ভবন’-এর উদ্বোধনকেও স্বাগত জানান।

তিনি বলেন, “অসম সুযোগই সমাজে বৈষম্য তৈরি করেছে। শিক্ষা কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। মানুষকে কেবল সুযোগ দিতে হবে। সুযোগ পেলে যে কেউ পণ্ডিত ও চিন্তাবিদ হতে পারে।” তিনি আবারও বলেন, “আম্বেদকর ছিলেন একজন মহান দার্শনিক, যিনি জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের পথে এগিয়েছিলেন।”

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।