আগরতলা, ১৯ অক্টোবর :
ত্রিপুরার রাজনীতি ফের সরগরম বক্সনগরের বিধায়ক তফাজ্জল হোসেনের দলবিরোধী মন্তব্যকে ঘিরে। বিজেপির ভেতরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায় যেন উন্মোচিত হয়েছে তাঁর মুখে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিককে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এই বিজেপি বিধায়ক।
ঘটনার সূত্রপাত সম্প্রতি এক প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি সভাপতি ও রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য। সেই মঞ্চেই তফাজ্জল হোসেন সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে, বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ফুটবল মাঠের উন্নয়নের জন্য সাংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে বিপ্লব দেব ও প্রতিমা ভৌমিক কোনও অর্থ বরাদ্দ করেননি। বক্তব্যের সময় রাজীব ভট্টাচার্য তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলেও, বিধায়ক তফাজ্জল ক্ষোভ উগরে দেন প্রকাশ্য মঞ্চে। এই ঘটনার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে প্রবল অস্বস্তি ও তীব্র প্রতিক্রিয়া।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছেন, দলীয় নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এই ঘটনাটি নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। দলের নিয়ম অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজেপিতে কেউই দলের শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নয়। তাঁর কথায়, এ ধরনের আচরণ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না এবং দলীয় নেতৃত্ব একযোগে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।
রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, তফাজ্জল হোসেনের এই মন্তব্য আসলে দলের ভেতরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষেরই প্রতিফলন। কিছু মহলের দাবি, নিজের বিরুদ্ধে উঠা নানা অভিযোগ ও সমালোচনার জবাব ঘোরানোর উদ্দেশ্যেই তিনি দলের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে এভাবে মুখ খুলেছেন।
স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, বক্সনগর বিধায়কের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অনিয়ম, প্রশাসনিক কর্তব্যে হস্তক্ষেপ ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, এক সরকারি আধিকারিককে প্রকাশ্যে শাসানোর ঘটনাও নাকি ঘটেছে তাঁর সঙ্গে, যা জেলা প্রশাসনের মধ্যেও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় দলীয় নেতৃত্বের একাংশও বিধায়কের আচরণে রীতিমতো বিরক্ত। তাছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগও সামনে এসেছে — বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকা ও নেশাকারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার বিষয়েও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্ক বিজেপির ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। দলের ভেতরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে এখনও সম্পূর্ণ প্রশমিত হয়নি, তা তফাজ্জল হোসেনের মন্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে।
রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। জানা গেছে, তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত বা দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়েও উচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সব মিলিয়ে, বক্সনগর বিধায়কের বিতর্কিত মন্তব্যে ত্রিপুরার রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই বিষয় নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

