নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ অক্টোবর :
ত্রিপুরা সরকার এবার প্রতিবেশী দেশ নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সংক্রান্ত বৈঠক ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র সরকার, এমনই জানালেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ।
তিনি আজ আগরতলার গোকুলনগর রাস্তারমাথা ক্রীড়াঙ্গনে এনইআর পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-এর আওতায় নির্মিত ১৩২ কেভি গোকুলনগর সাব-স্টেশন উদ্বোধনে এই তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, ৪৩.৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশনের মূল লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশালগড়, অফিস টিলা, সেন্ট্রাল জেল, গোলাঘাটি, মধ্যপুর, শেখেরকোট, ফুলতলি, বিক্রমনগর, কমলাসাগরসহ প্রায় ৪৮,৭৪০টি পরিবার উপকৃত হবেন।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ আরো বলেন, ত্রিপুরায় মূলত গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্যাসের মজুত কমছে। আগে রাজ্যে ৭ লাখ ২১ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩৮ হাজারে। আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দপ্তর।”
মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের আগে রাজ্যে মাত্র ১২টি ১৩২ কেভি সাব-স্টেশন ছিল, যা এখন ২১টিতে উন্নীত হয়েছে, এবং আরও দুটি নির্মাণাধীন। আগে যেখানে ৪৮৫ কিলোমিটার ১৩২ কেভি লাইন ছিল, সেখানে গত সাত বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮৬ কিলোমিটারে, এবং আরও ১০২ সার্কিট কিমি লাইনের কাজ চলছে।
২০১৮ সালের আগে রাজ্যে ৪৪টি ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ৭৫টিতে পৌঁছেছে, এবং আরও ১৮টি নির্মাণাধীন। তাছাড়া আগে যেখানে মাত্র ৯৫ কিমি আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল ছিল, সেখানে এখন ৫৭১ কিমি কেবল স্থাপন ও সম্পন্ন হয়েছে।
রোখিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “গ্যাসের অভাবে রোখিয়ায় বর্তমানে মাত্র ১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যদিও পরিকল্পনা ছিল ৬৩ মেগাওয়াট উৎপাদনের। গ্যাসের ঘাটতি পূরণে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৯৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগে কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা চলছে।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “ছা মনু এলাকায় ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যার ডিপিআর প্রস্তুতির কাজ চলছে। পাশাপাশি সূর্যমণিনগরে ৪০০ কেভি সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, এবার নেপালেও রপ্তানির পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে আজ দিল্লিতে বৈঠক হচ্ছে, এবং এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র সরকার। এছাড়াও রাজ্যের সব সরকারি দপ্তরে রুফটপ সোলার সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়িকা অন্তরা সরকার দেব, বিশালগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী আতশি দাস, ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেডের জিএম রঞ্জন দেববর্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ।

