নয়াদিল্লি, ১২ অক্টোবর : সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি. চিদম্বরম ১৯৮৪ সালের ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-কে ‘ভুল পথ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। চিদম্বরম বলেন, সে সময় গোল্ডেন টেম্পল পুনরুদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, এবং সেই ভুল সিদ্ধান্তের মূল্যই জীবন দিয়ে চুকিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
কাশৌলিতে একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চিদম্বরম বলেন, “আমি সেনাবাহিনীর প্রতি কোনও অসম্মান জানাতে চাই না, কিন্তু এটা বলতেই হবে—সেটা ছিল ভুল পদ্ধতি। পরে আমরা দেখিয়েছিলাম কীভাবে সেনা ছাড়াই সঠিক পথে সমাধান করা যায়। ব্লু স্টার ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, এবং আমি একমত—ইন্দিরা গান্ধীকে সেই ভুলের জন্য জীবন দিতে হয়েছে।”
তিনি আরও স্পষ্ট করে জানান, এটি শুধুমাত্র ইন্দিরা গান্ধীর একক সিদ্ধান্ত ছিল না। সেনাবাহিনী, পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং প্রশাসনের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই এই অপারেশন চালানো হয়েছিল।
চিদম্বরমের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। সিনিয়র কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভি বলেছেন, “অপারেশন ব্লু স্টার সঠিক না ভুল—তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু এখন, ৫০ বছর পরে, চিদম্বরমের এই মন্তব্যের প্রয়োজন কী? তিনি যা বলছেন, তা তো বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।”
রশিদ আলভি ইঙ্গিত দেন যে চিদম্বরম হয়তো কোনও চাপের মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে এখনও বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক মামলা ঝুলে আছে। প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি কোনও চাপের মুখে পড়েই বারবার দলকে আঘাত করছেন?”
কংগ্রেসের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, “একজন জ্যেষ্ঠ নেতা, যিনি দলে সবকিছু পেয়েছেন, তার কাছ থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য কাম্য নয়। বারবার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়।”
বর্তমান পাঞ্জাব পরিস্থিতি নিয়ে চিদম্বরম বলেন, “খালিস্তানের দাবির জোর এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। এখন রাজ্যের প্রধান সমস্যা হলো অর্থনৈতিক সঙ্কট। আমি যতবার পাঞ্জাবে গিয়েছি, ততবারই বুঝেছি যে বিচ্ছিন্নতাবাদের চেয়ে এখন বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের দিনে সর্বাধিক অবৈধ অভিবাসী পাঞ্জাব থেকেই আসছে।”
১৯৮৪ সালের ১ থেকে ৮ জুনের মধ্যে চালানো হয়েছিল ‘অপারেশন ব্লু স্টার’। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকার এই অভিযান চালায় পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে। জারনেইল সিং ভিন্দরানওয়ালে এবং তাঁর অনুগামীরা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে নিজেদের ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন।
সেনা অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই অভিযানে ট্যাঙ্ক এবং ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, ফলে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়—তাদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী, সেনা সদস্য এবং নিরীহ সাধারণ নাগরিকও ছিলেন। এই হামলা গুরুদ্বারের পবিত্রতা নষ্ট করায় শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এর ফলে অবিলম্বে বিপর্যয় নেমে আসে। ৩১ অক্টোবর, ১৯৮৪ সালে, দুই শিখ দেহরক্ষী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করে, যার পরপরই দেশজুড়ে ব্যাপক অ্যান্টি-সিখ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
চিদম্বরমের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই পুরনো ক্ষতকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে, যা কংগ্রেসের অন্দরে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

