নীল অর্থনীতির উত্থান: সামুদ্রিক সংরক্ষণে বৈশ্বিক বিনিয়োগে নতুন গতি, আবুধাবিতে আইইউসিএন কংগ্রেসে নেতাদের বার্তা

আবুধাবি, ১১ অক্টোবর : জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের মোকাবিলায় সমুদ্র ও টেকসই সামুদ্রিক শিল্পে বিনিয়োগ আগ্রহ চোখে পড়ার মতোভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন কংগ্রেসে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও মহাসাগর সংরক্ষণে সক্রিয় ব্যক্তিরা সমুদ্রকে মানবজাতির অন্যতম প্রধান মিত্র হিসেবে অভিহিত করেন।

বিশ্ব জলবায়ু আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন। পাঁচ বছর আগেও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বা নিউইয়র্কের ক্লাইমেট উইক-এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমুদ্র-সংক্রান্ত ইস্যু প্রায় উপেক্ষিত ছিল। আজ এই বিষয়গুলো বিশ্ব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রযুক্তি ও উদ্যোগভিত্তিক সমাধানসমূহ টেকসই রূপান্তরের গতি বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রূপান্তর আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে, যেখানে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও ডিসরাপটিভ উদ্যোগ অপরিহার্য।

ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট-এর ওসিয়ান প্রোগ্রামের গ্লোবাল ডেপুটি ডিরেক্টর সিনথিয়া বারজুনা বলেন, “সমুদ্র এখন আমাদের ত্রিমাত্রিক পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার প্রধান হাতিয়ার—জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তি এবং অতিরিক্ত মাছ শিকার সব কিছুতেই সমুদ্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত দেশগুলো চিলি ও অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বাধীন ‘১০০% অ্যালায়েন্স’-এ যোগ দেবে, যেখানে দেশগুলো তাদের জলসীমার টেকসই ব্যবস্থাপনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে এই ইতিবাচক গতিপথের মাঝেও একটি চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য -এর মধ্যে সমুদ্র সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রাগুলো এখনও সবচেয়ে কম অর্থায়ন পায়। বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক নীতিমালা এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রূপান্তর সম্ভব। সংরক্ষণ বনাম ব্যবসা নয়, বরং ‘রিজেনারেটিভ বিজনেস মডেল’ অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত লক্ষ্যকে একসূত্রে বেঁধে আনতে পারে।

এই ধরণের ব্যবসায়িক মডেল থেকে মুনাফা আসতে সময় লাগে, তাই প্রয়োজন ‘পেশেন্ট ক্যাপিটাল’—অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ধৈর্যশীল মূলধন।

অন্যদিকে, সংরক্ষিত সামুদ্রিক অঞ্চলে দৃশ্যমান পুনরুদ্ধারের লক্ষণ নতুন আশার সৃষ্টি করছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ছোট ছোট মেয়েদের সাঁতার শেখানোর মতো কমিউনিটি উদ্যোগ নতুন প্রজন্মকে সমুদ্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করছে এবং সুরক্ষার দায়িত্ব অনুভব করতে শেখাচ্ছে।

সম্প্রতি অনুমোদিত বিবিএনজে চুক্তি বা ‘হাই সিস ট্রিটি’ আন্তর্জাতিক সমুদ্র শাসনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বক্তারা মনে করেন, সমুদ্র একটি আন্তঃসংযুক্ত বাস্তুতন্ত্র—এটি রক্ষার জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক সমন্বিত উদ্যোগ।