নয়াদিল্লি, ১১ অক্টোবর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সকাল ১০:৩০ টায় দিল্লির ভারতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এ একটি বিশেষ কৃষি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি দেশের কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতগুলিকে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ৪২,০০০ কোটিরও বেশি মূল্যের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন, সূচনা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য কৃষকের কল্যাণ, কৃষিক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা, এবং গ্রামীণ পরিকাঠামোর বিকাশ। আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রচার, কৃষকদের সহযোগিতা এবং কৃষি-ভিত্তিক উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এই অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য।
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি প্রধান কৃষি প্রকল্পের সূচনা করবেন, যার মোট বাজেট ৩৫,৪৪০ কোটি টাকা।
প্রথম প্রকল্প ‘পিএম ধান ধান্য কৃষি যোজনা’, যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৪,০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের লক্ষ্য কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ফসল বৈচিত্র্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং টেকসই কৃষি অনুশীলন চালু করা। দেশের ১০০টি নির্বাচিত জেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে ফসল-পরবর্তী সংরক্ষণ ব্যবস্থা, সেচ সুবিধা ও কৃষকদের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
দ্বিতীয় প্রকল্প ‘দালহান আত্মনির্ভরতা মিশন’, যার জন্য বরাদ্দ ১১,৪৪০ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ডাল উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, চাষের এলাকা বিস্তার এবং সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ডাল চাষের পরিপূর্ণ মূল্যচেইনকে শক্তিশালী করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি, পশুপালন, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে ৫,৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন ও উৎসর্গ করবেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলি হল বেঙ্গালুরু ও জম্মু-কাশ্মীরে কৃত্রিম গর্ভাধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গুজরাটের অমরেলি ও বানাসে ‘সেন্টার অফ এক্সিলেন্স’, অসমে আইভিএফ ল্যাব, মেহসানা, ইন্দোর ও ভিলওয়ারায় মিল্ক পাউডার প্লান্ট এবং তেজপুরে (অসম) ফিশ ফিড প্লান্ট। পাশাপাশি, বিভিন্ন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ক্লাস্টার ও কোল্ড চেইন পরিকাঠামোরও সূচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও ৮১৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলায় ইন্টিগ্রেটেড কোল্ড চেইন ও রেডিয়েশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার, উত্তরাখণ্ডে ট্রাউট ফিশারিজ, নাগাল্যান্ডে ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকোয়া পার্ক, পুদুচেরির কারাইকাল-এ স্মার্ট ফিশিং হারবার এবং ওড়িশার হিরাকুদের অত্যাধুনিক অ্যাকোয়া পার্ক।
এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী পালসেস চাষে নিযুক্ত কৃষকদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন, যাঁরা এফপিও, কৃষি অবকাঠামো তহবিল ইত্যাদির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। তিনি ‘ন্যাচারাল ফার্মিং’-এ সার্টিফায়েড কৃষক, মৈত্রী (গ্রামীণ ভারতের মাল্টি-পারপাস কৃত্রিম গর্ভাধান প্রযুক্তিবিদ), এবং পিএমকেএসকে ও সিএসসি -তে রূপান্তরিত পিএসিস-কে সার্টিফিকেট প্রদান করবেন।
এই বিশেষ কৃষি অনুষ্ঠানে দেশের কৃষিখাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য সাফল্যের উদযাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ১০,০০০টি কৃষক উৎপাদক সংস্থা (এফপিও)-তে ৫০ লাখ কৃষকের সদস্যপদ অর্জন একটি বড় মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া, ১,১০০টি এফপিও ইতিমধ্যে বার্ষিক এক কোটি টাকার বেশি টার্নওভার অর্জন করেছে, যা কৃষকদের আর্থিক সক্ষমতা ও সংগঠনের দক্ষতা বাড়ার প্রমাণ। ন্যাশনাল মিশন ফর ন্যাচারাল ফার্মিং-এর অধীনে ৫০,০০০ কৃষক প্রাকৃতিক কৃষি চর্চায় প্রশিক্ষিত ও সার্টিফায়েড হয়েছেন। গ্রামীণ অঞ্চলে পশুপালন ও কৃত্রিম গর্ভাধানের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৮,০০০ মৈত্রী (গ্রামীণ ভারতে বহুমুখী এআই টেকনিশিয়ান) প্রযুক্তিবিদকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ১০,০০০-এরও বেশি ই-মাল্টিপারপাস প্রাইমারি কৃষি সমবায় সমিতি এখন কার্যকর হয়েছে এবং সমান সংখ্যক প্যাকস রূপান্তরিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কিষান সমৃদ্ধি কেন্দ্র এবং কমন সার্ভিস সেন্টার-এ। এই সব প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার পথে সরকার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

