নয়াদিল্লি, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ
২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত প্রতিশোধ না নেওয়ার কারণ নিয়ে বড়সড় মন্তব্য করলেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম। তিনি স্বীকার করেছেন, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস সরাসরি দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে ভারত কোনও সামরিক পদক্ষেপ না নেয়। আন্তর্জাতিক চাপ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রকের অবস্থানের কারণে শেষমেশ ইউপিএ সরকার প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ থেকে সরে দাঁড়ায়।
চিদাম্বরম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রতিশোধ নেওয়ার ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল। কিন্তু গোটা বিশ্ব দিল্লিতে নেমে এসেছিল, সবাই বলছিল যুদ্ধ শুরু করবেন না। কন্ডোলিজা রাইস এসে প্রধানমন্ত্রী ও আমাকে বলেছিলেন, দয়া করে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।”
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রক ও আইএফএস আধিকারিকদের মতামতই এই সিদ্ধান্তে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ১০ জন লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি মুম্বইয়ে একযোগে হামলা চালিয়ে ১৭৫ জনকে হত্যা করেছিল। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস, তাজ মহল হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল ও নরিমন হাউস—এই সব জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল। ধৃত জঙ্গি আজমল কাসাবকে ২০১২ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়।
চিদাম্বরমের এই মন্তব্যে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, “দেশ জানত যে বিদেশি চাপের কারণে ইউপিএ সরকার মুম্বই হামলার মোকাবিলা সঠিকভাবে করতে পারেনি। আজ স্বয়ং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা স্বীকার করলেন।”
বিজেপি মুখপাত্র শহজাদ পুনাওয়ালা অভিযোগ করেন, চিদাম্বরম শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ চাইছিলেন, কিন্তু অন্যরা তাঁকে থামিয়ে দেয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সোনিয়া গান্ধী না কি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চিদাম্বরমকে আটকে দিয়েছিলেন? ইউপিএ সরকার কেন কন্ডোলিজা রাইসের কথায় চলছিল?”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কংগ্রেস পাকিস্তানকে মুম্বই হামলা ও ২০০৭ সালের সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে ‘ক্লিন চিট’ দিয়েছিল এবং একই সঙ্গে ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ বয়ানকে সামনে এনেছিল। বিজেপির দাবি, পাকিস্তান বারবার সন্ত্রাসী হামলা চালালেও ইউপিএ সরকার ইসলামাবাদকে মোস্ট ফেভার্ড নেশন মর্যাদা দিয়েছিল এবং আজও কংগ্রেস ভারতের সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে।

