নয়াদিল্লি , ২৭ সেপ্টেম্বর : ভারতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মোট ১০,০২৩টি নতুন চিকিৎসা আসন (৫,০০০টি স্নাতকোত্তর এবং ৫,০২৩টি স্নাতক) যুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ১৫,০৩৪ কোটি, যার লক্ষ্য দেশের চিকিৎসা শিক্ষার পরিকাঠামোকে মজবুত করা এবং গ্রামীণ ও জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে চিকিৎসক সংকট মেটানো।
নতুন আসনগুলি ২০২৮-২৯ অর্থবছরের মধ্যে চালু হবে। এর ফলে আগামী পাঁচ বছরে মোট ৭৫,০০০ নতুন চিকিৎসা আসন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার ১০,৩০৩.২০ কোটি (৬৮.৫%) এবং রাজ্য সরকারগুলি ৪,৭৩১.৩০ কোটি (৩১.৫%) বিনিয়োগ করবে। গড়ে প্রতি একটি চিকিৎসা আসনের জন্য খরচ হবে প্রায় ১.৫ কোটি।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স-এ লেখেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে স্পন্সরকৃত প্রকল্প-এর ফেজ-III অনুমোদনের ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পিজি ও ইউজি আসন যুক্ত হবে। এটি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে এবং চিকিৎসা শিক্ষার পরিকাঠামো শক্তিশালী করবে। এর ফলে দেশের প্রতিটি প্রান্তে দক্ষ চিকিৎসকের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।”
গত এক দশকে ভারতের চিকিৎসা শিক্ষা খাতে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে ৩৮৭টি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও বর্তমানে (২০২৫-২৬) এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৮-এ। এমবিবিএস আসনের সংখ্যা ১৪১% বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১,২৩,৭০০ এবং পিজি আসন বেড়েছে ১৪৪%।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য় সুরক্ষা যোজনা -র আওতায় ২২টি নতুন এমস গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা তৃতীয় স্তরের চিকিৎসা ও উচ্চ শিক্ষাকে প্রসারিত করবে।
চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণকে আরও গতিশীল করতে, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে জাতীয় চিকিৎসা কমিশন নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (অনুষদের যোগ্যতা) প্রবিধান চালু করেছে। এতে ২২০ শয্যার বেশি বিশিষ্টতা সম্পন্ন সরকারি হাসপাতালগুলিকে টিচিং ইনস্টিটিউশনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং সিনিয়র রেসিডেন্সি ছাড়াও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যদি তারা দুই বছরের মধ্যে BCBR কোর্স সম্পন্ন করেন। এছাড়াও, নতুন মেডিক্যাল কলেজগুলিকে একসঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
১০,০২৩টি নতুন আসন তৈরির এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগই তৈরি হবে না, চিকিৎসা শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হবে। পাশাপাশি, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের প্রাপ্যতা বাড়বে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া এলাকায়। এটি চিকিৎসা পরিকাঠামোয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে — যেমন: চিকিৎসক, অধ্যাপক, প্যারামেডিক, গবেষক ও সহায়ক কর্মী ইত্যাদি।
সরকারি হাসপাতাল ও কলেজের বিদ্যমান পরিকাঠামো ব্যবহার করে এই সম্প্রসারণ খরচ সাশ্রয়ী হবে এবং রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার সমবন্টন নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে, ভারতে চিকিৎসা পর্যটনের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠবে।
বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার (১.৪ বিলিয়ন) দেশে, প্রত্যন্ত ও জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। চিকিৎসক সংকট মেটাতে এই পদক্ষেপ স্বাস্থ্যগত বৈষম্য হ্রাস করবে এবং দেশের স্বাস্থ্য সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
এই প্রকল্প ভারতের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং আগামী দিনে ভারতকে গ্লোবাল মেডিক্যাল এডুকেশন ও হেল্থকেয়ার হাবে পরিণত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

