ভবনগর, ২০ সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার একদিনের গুজরাট সফরে পৌঁছান এবং ভাবনগরে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। সকাল ১০টা নাগাদ তিনি ভাবনগর বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং সেখান থেকে জওহর গ্রাউন্ড পর্যন্ত রোড শো করেন। এরপর তিনি ‘সমুদ্র থেকে সমৃদ্ধি কর্মসূচির অধীনে গুজরাট ও সৌরাষ্ট্রে ৩৪,২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। এই প্রকল্পগুলি প্রধানত বন্দর, শিপিং এবং জলপথের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা কেন্দ্রীয় পোর্ট, শিপিং ও ওয়াটারওয়েজ মন্ত্রক, গুজরাট মেরিটাইম বোর্ড ও অন্যান্য রাজ্যের মেরিটাইম বোর্ডের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রায় ৩৫ মিনিটের ভাষণে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা, পুরনো ঔপনিবেশিক আইনের সংস্কার এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত ভারত গড়ার সংকল্পের কথা বলেন। মোদী বলেন, “আজ ভারতের কোনও বৈদেশিক শত্রু নেই, কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অন্য দেশের উপর নির্ভরতা। যত বেশি বিদেশি নির্ভরতা, তত বেশি দেশের ব্যর্থতা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আত্মনির্ভরতা একমাত্র পথ।” তিনি আত্মনির্ভর ভারতকে “১০০ দুঃখের এক দাওয়াই” বলে উল্লেখ করেন এবং জনগণকে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করে বলেন, স্বাধীনতার পর দক্ষতা ও শিল্পকে অগ্রাধিকার না দেওয়ার ফলে ভারত তার সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেনি। কংগ্রেসের আমলে দীর্ঘদিন ‘লাইসেন্স-রাজ’ চলেছে এবং গ্লোবালাইজেশনের সময়ে দেশীয় শিল্পের বদলে আমদানিনির্ভর নীতি নেওয়া হয়েছে, যার ফলে শিপিং খাতসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ খাতে ক্ষতি হয়েছে। মোদী বলেন, “ভারত এক সময় শিপ বিল্ডিং-এর বিশ্বকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ভুল নীতির কারণে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।”
মোদী জানান, ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশকে একটি ‘বিকসিত ভারত’ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আত্মনির্ভর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তিনি বলেন, “চিপ হোক বা শিপ, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সবকিছু ভারতেই তৈরি হবে।” এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সাম্প্রতিক সংসদ অধিবেশনে বহু ঔপনিবেশিক আইন বাতিল করে নতুন আইন আনা হয়েছে, বিশেষ করে মেরিটাইম খাতে। এতে শিপিং শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এদিন ভাবনগর থেকে ভার্চুয়ালি দেশের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক মুম্বই ইন্টারন্যাশনাল ক্রুজ টার্মিনাল -এর উদ্বোধন করেন। ব্যালার্ড পিয়ারে নির্মিত এই টার্মিনাল ৪.১৫ লক্ষ বর্গফুট জায়গাজুড়ে তৈরি হয়েছে এবং প্রতি বছর ১০ লক্ষ যাত্রীকে পরিষেবা দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। এখানে একসঙ্গে পাঁচটি ক্রুজ জাহাজ নোঙর করতে পারবে এবং যাত্রীদের জন্য ৭২টি চেক-ইন ও ইমিগ্রেশন কাউন্টার রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পোর্ট, শিপিং ও জলপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানান, এই টার্মিনাল মুম্বইয়ের সমুদ্র-ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে ধরবে এবং ভারতকে একটি গ্লোবাল ক্রুজ ট্যুরিজম হাবে পরিণত করবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোদী আহমেদাবাদ জেলার লোথলে অবস্থিত ন্যাশনাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্স-এরও পরিদর্শন করবেন। ৪,৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প ভারতীয় সামুদ্রিক ইতিহাসকে নতুনভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। লোথল একসময় সিন্ধু সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র ছিল। সেই ঐতিহাসিক গুরুত্বের উপর ভিত্তি করেই এনএমএইচসি গড়ে তোলা হচ্ছে। এই হেরিটেজ কমপ্লেক্স শুধু পর্যটনের কেন্দ্র নয়, গবেষণা ও শিক্ষারও অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানকার পর্যটন ও শিল্পের বিকাশে স্থানীয় মানুষদের জন্য হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর শুধু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তার ভাষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারতের বার্তা, ঐতিহাসিক গৌরবের পুনরুজ্জীবন এবং ভারতের ভবিষ্যতের জন্য একটি সুসংহত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়।

