বিধানসভা অধিবেশনের সময় বৃদ্ধি নিয়ে সরব বিরোধিরা, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সম্ভব না হলেও আগামী অধিবেশনে অবশ্যই সময় বাড়ানো হবে, আশ্বস্ত করেন পরিষদীয় মন্ত্রী

আগরতলা, ১৯ সেপ্টেম্বর : সম্প্রতি আগরতলা পুর নিগমে ১৬ কোটি টাকার দূর্নীতি খবর প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু পুর নিগমই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। বিধানসভা অধিবেশনে এসমস্ত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর আলোচনা করা উচিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। জনসাধারণের সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য অন্তত আরও তিন দিন অধিবেশন বাড়ানো প্রয়োজন। আজ ত্রিপুরা বিধানসভা অধিবেশনের প্রথম দিনে শোক প্রকাশের পর চলমান দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়। একই দাবি জানান সিপিআই(এম)-এর বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তীও। জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে প্রশাসনিক ব্যস্ততা চরমে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা অধিবেশনের সময় বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে, আগামী বিধানসভা অধিবেশনে অবশ্যই অধিক সময় রাখা হবে, আশ্বস্ত করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা বিধানসভার অষ্টম অধিবেশনের দিনক্ষণ কমানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে আজ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিএসি কমিটি অধিবেশনের দিনসংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে, কংগ্রেস, সিপিআই(এম) সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।

এদিন বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেন, যখন রাজ্যে একের পর এক দফতরে দুর্নীতির খবর সামনে আসছে, তখন মাত্র দুই দিনের অধিবেশন বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আগরতলা পুর নিগমে ১৬ কোটি টাকার দূর্নীতি খবর প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু পুর নিগমই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি ছেয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সফরের কারণে কেন বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত থাকবে। বেকারত্ব, কৃষকদের সমস্যা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলির কি কোনো গুরুত্ব নেই, বলে প্রশ্ন তুলেন তিনি।

বিধানসভা অধিবেশনের দিনক্ষণ সংক্ষিপ্তের বিষয়ে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নবরূপে সজ্জিত উদয়পুর মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের উদ্বোধন করতে রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করেই আগামী সোমবার অধিবেশন বসছে না।ওই দিনের কার্যবিবরণী ২৩ সেপ্টেম্বর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে অধিবেশনের দিনক্ষণ সংক্ষিপ্ত করা উচিত হয়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের জন্য জনগণের স্বার্থ সম্বলিত বিষয় প্রাধন্য পাবে না। আশা করি, রাজ্যবাসী শাসকগোষ্ঠীর এই সিদ্ধান্তে খুশি হবেন না।

এবিষয়ে মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় বলেন, বিএসি বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি অংশ নেননি। অথচ তাদের আগে থেকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাতে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে বিধানসভার অধিবেশনের সময় বৃদ্ধি না হওয়া রাজ্যবাসীর কাছে ভালো বার্তা দেয় না।

এবিষয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির উদ্বোধন করতে সরকারি অনুষ্ঠানে আসছেন। সেখানে বিধানসভা অধিবেশনে চলবে সেটা সম্ভব নয়। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে প্রশাসনের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দফতরপ্রধানরা ব্যস্ত থাকবেন, ফলে প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা সম্ভব হবে না। তবে আমি আশ্বস্ত করছি, আগামী অধিবেশনে দিনসংখ্যা বাড়ানো হবে।

পরবর্তীতে উপাধ্যক্ষ রাম প্রসাদ পাল বিএসি-র রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তা গৃহীত হয়েছে।