ডোডা উত্তপ্ত: আপ বিধায়ক মেহরাজ মালিকের গ্রেফতারে বিক্ষোভ, কারফিউ-সদৃশ নিষেধাজ্ঞা, ইন্টারনেট বন্ধ, পিছিয়ে দেওয়া হল বোর্ড পরীক্ষা

শ্রীনগর, ১০ সেপ্টেম্বর : জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলায় আম আদমি পার্টির বিধায়ক মেহরাজ মালিককে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করার পর তীব্র বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কারফিউ সদৃশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং সম্পূর্ণ ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে সমস্ত বোর্ড পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

ডোডা থেকে নির্বাচিত একমাত্র এএপি বিধায়ক মেহরাজ মালিককে সোমবার পিএসএ-তে গ্রেফতার করেন জেলা শাসক হরবিন্দর সিং। অভিযোগ, কিছুদিন আগে এক ভিলেজারের ভাড়ার টাকা না মেটানোর বিষয় নিয়ে জেলা শাসকের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মালিক এবং সেখানে তিনি অশ্রাব্য ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে “জনশৃঙ্খলার জন্য গুরুতর হুমকি” উল্লেখ করে পিএসএ প্রয়োগ করা হয়।

উল্লেখ্য, পিএসএ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে বিচার ছাড়াই সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত আটক রাখা যেতে পারে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদ সম্পর্কিত বহু মামলায় এই আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বারবার। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর পুনরায় পিএসএ-তে গ্রেফতার করার ঘটনাও এখানে নতুন নয়, যাকে অনেকেই ‘রিভলভিং ডোর ডিটেনশন’ বলে থাকেন।

এদিকে ডোডায় বিক্ষোভ ক্রমেই জোরালো রূপ নিচ্ছে। মেহরাজ মালিকের মুক্তির দাবিতে জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ চালায়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ অফিসারসহ একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।

এই ঘটনার পর মালিকের পরিবার শ্রীনগরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে একযোগে ছবি প্রকাশ করেন ও এক্স -এ লেখেন, “পিএসএ প্রয়োগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং প্রতিরোধমূলক আটক আইনের নির্লজ্জ অপব্যবহার।”

তিনি আরও বলেন, “একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ গণতন্ত্রে মানুষের আস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যদি কোনও মন্তব্য আপত্তিকর হয়ে থাকে, তা বিধানসভায় স্পিকারের মাধ্যমে সংশোধন করা যেত।”

বর্তমানে ডোডা ও আশেপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা জারি রয়েছে। প্রশাসনের একাংশ স্বীকার করেছে যে আন্দোলনের ব্যাপকতা তাদেরও চমকে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ ঠেকাতে গতকাল থেকেই কন্ট্রোল অর্ডার জারি হয়েছে।

পরিস্থিতির উপর প্রশাসনের কড়া নজর রয়েছে, তবে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক মহলে চাপ বাড়ছে বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষকরা।