কিয়েভ, ৫ সেপ্টেম্বর: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন তার আকাশসীমা সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রকে একটি নতুন ফর্ম্যাট প্রস্তাব করেছে। বৃহস্পতিবার এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেন আকাশসীমা সুরক্ষায় একটি ফর্ম্যাট প্রস্তাব করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।”
এই মন্তব্যটি আসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির কথোপকথনের পর, যা অনুষ্ঠিত হয় প্যারিসে “প্যারিসে “ইচ্ছার জোট”” নামে একটি বৈঠকের পরে। এই বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন, ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে, ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা করেন, ইউরোপীয় দেশসহ মোট ২৬টি দেশ ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সময় “নিশ্চয়তা প্রদানকারী বাহিনী মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও এই বাহিনী সরাসরি ফ্রন্ট লাইনে মোতায়েন হবে না, তবুও তারা স্থল, নৌ ও আকাশপথে সহায়তা দিতে পারবে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, “এটি একটি বাস্তব এবং গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।” পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-এর সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অত্যাবশ্যক।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইউক্রেনকে ৩,৩৫০টি এক্সটেন্ডেড-রেঞ্জ অ্যাটাক মিউনিশন ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ সমাধানের কথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সামরিক সহায়তা কেবল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
প্রসঙ্গত, প্যারিস বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি নেই বললেই চলে। গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে এবং পরে ওয়াশিংটনে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এর পর থেকে তিনি একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।
তবে পুতিন এখনো সেই বৈঠকের ব্যাপারে সম্মতি দেননি। বুধবার তিনি বলেন, “এই সপ্তাহে ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকের কোনও বাস্তব উদ্দেশ্য নেই।” তবে, তিনি মস্কোয় এমন একটি বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক নিয়ে কিছুটা সংশয়ী হলেও, তিন নেতার একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন,“কিছু একটা হতে যাচ্ছে, কিন্তু তারা এখনো প্রস্তুত নয়। তবে এটা হবেই। আমরা এটা শেষ করব।”
জেলেনস্কি বলেন, প্যারিস বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি আলোচনা করেছে।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান সমন্বয় করেছি এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার উপাদানগুলো পর্যালোচনা করেছি। আমি কৃতজ্ঞ, সবাই বুঝেছে — একটি শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।” তিনি আরও বলেন, “ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন আরও বাড়াতে হবে এবং রাশিয়ার ওপর চাপ আরও জোরদার করতে হবে।”

