মোদি-শি-পুতিন সাক্ষাতের পর ট্রাম্পের আক্রমণ, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যকে ‘একতরফা বিপর্যয়’ বললেন

ওয়াশিংটন, ২ সেপ্টেম্বর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ককে “একতরফা বিপর্যয়” বলে আখ্যা দিলেন।

ট্রাম্প টুইটের মতো নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা অত্যন্ত সীমিত, কিন্তু তারা আমাদের দেশে বিপুল পণ্য রপ্তানি করে। বহু দশক ধরে এই সম্পর্ক একতরফা। এর প্রধান কারণ, ভারত আমাদের পণ্যের উপর অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে মার্কিন ব্যবসাগুলি ভারতে পণ্য বিক্রি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ভারত এখন বলছে তারা শুল্ক ‘শূন্য’ করতে চায়, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটা বহু বছর আগেই করা উচিত ছিল। ভারত রাশিয়া থেকে অধিকাংশ তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কিনছে, আমাদের থেকে খুব কম। এটা পরিবর্তন হওয়া উচিত।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে মার্কিন ডেমোক্র্যাট দল। কংগ্রেসের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি-র ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তা শুধুই আমেরিকানদের ক্ষতি করছে এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে ধ্বংস করছে।”

তাঁরা আরও বলেন, “চীন, যা রাশিয়া থেকে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি তেল আমদানি করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, বিষয়টা ইউক্রেন নয়, অন্য কিছু।”

ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ফোরাম ফর ট্রেড জাস্টিস, যা কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পরিবেশকর্মী ও স্বাস্থ্যসংগঠনগুলির সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট, এক বিবৃতিতে জানায় — “এই চুক্তি ‘ন্যায্য বাণিজ্য’-এর চেয়ে অনেক বেশি ভারতীয় নীতিকে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা।”

তাদের বক্তব্য, “বর্তমান আলোচনায় ভারতকে আত্মসমর্পণ না করে সুদৃঢ় অবস্থানে থাকা উচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই আলোচনাকারীদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে, যাতে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হয় এবং কোনওভাবে আমেরিকা ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনও চুক্তি চাপিয়ে দিতে না পারে।”

তারা আরও যোগ করেছে, “চীন রাশিয়া থেকে ভারতের চেয়ে বেশি তেল আমদানি করে, তবুও তাদের ওপর কোনও শুল্ক আরোপ হয়নি। ভারতের জন্য এখানেই একটি বড় শিক্ষা লুকিয়ে আছে — আত্মসম্মান ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে এগোতে হবে।”