আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত প্রধানমন্ত্রী মোদী, মৃতের সংখ্যা ৮১২ ছাড়িয়েছে

নয়াদিল্লি, ১ সেপ্টেম্বর: আফগানিস্তানে গত রবিবার রাতে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১২। এই মর্মান্তিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জানিয়েছেন, ভারত মানবিক সাহায্য পাঠাতে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লেখেন, “আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে প্রাণহানিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এই কঠিন সময়ে আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। ভারত সবরকম মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পাঠাতে প্রস্তুত।”

এর আগে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে হওয়া এই বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই কঠিন সময়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। নিহতদের পরিবারের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের কুনার প্রদেশে গত ৩১ আগস্ট রাতে স্থানীয় সময় ১১টা ৪৭ মিনিটে ৬.০ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। সিনহুয়া সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূমির ৮ কিলোমিটার গভীরে। এই বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১২, এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আফগানিস্তান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল, কারণ এটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে ব্যাপক, ফলে উদ্ধারকার্যও চরমভাবে ব্যাহত হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে তালিবান সরকারের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৪,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে তাখার ও বাদাখশন প্রদেশে প্রায় ৪,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গত এক দশকে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭,০০০ জনের, অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ৫৬০ জনের প্রাণহানি ঘটে।

বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্ধারকারী দলগুলো দুর্গম এলাকাগুলিতে পৌঁছাতে লড়াই করছে। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, ফলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর আফগানিস্তানে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন, ভারত যে কোনও ধরনের মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত। অতীতেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ভারত আফগানিস্তানে ত্রাণ ও সহায়তা পাঠিয়েছে।

এই কঠিন সময়ে আফগান জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে একযোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি।