বিহারে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ – রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে উত্তাল পরিস্থিতি

ছাপড়া, ৩০ আগস্ট : কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বর্তমানে বিহারে তাঁর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরেই বিহারে এই যাত্রা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে এবং আজ সারণ জেলার পথে চলতে চলতে এই যাত্রা এক নতুন কারণে শিরোনামে উঠে এসেছে। সারণের এক জনসমাবেশে রাহুল গান্ধীর সামনে বিজেপি কর্মীরা ‘নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন, পাশাপাশি কিছু কর্মী কালো পতাকা প্রদর্শন করেন, যা স্থানীয়ভাবে বিরোধিতার এক চরম দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিন, শনিবার, রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, রাজদল নেতা তেজস্বী যাদবসহ মহাগঠবন্ধনের অন্যান্য নেতারা একটি খোলা জিপে বসে জনগণের মধ্যে অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন। সেই সময়ে, কিছু বিজেপি সমর্থকরা এগিয়ে এসে মোদী জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে শুরু করেন। এরপর সেই বিজেপি কর্মীরা কালো পতাকা প্রদর্শন করে, যা সাধারণত প্রতিবাদ ও বিরোধিতা প্রদর্শনের একটি প্রচলিত চিহ্ন।

এটি প্রথম নয়, এর আগেও রাহুল গান্ধী ও তার সহযাত্রী নেতাদের যাত্রার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে, দারভাঙ্গা শহরের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে এক বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়, যা জনমত ও মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই সময়, অভিযুক্ত রফিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে দ্রুত পুলিশের হেফাজতে পাঠানো হয়।

আজকের ঘটনাটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার একটি সাধারণ দৃশ্য, যেখানে একপক্ষের বিরোধিতা অন্যপক্ষের জনসমর্থনে চ্যালেঞ্জ জানায়। তবে, যাত্রা চলাকালে রাহুল গান্ধী বিরোধী স্লোগান ও কালো পতাকার প্রতিবাদ মেনে নিতে গিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি প্রদর্শন করেন। স্লোগান শোনার পর, তিনি তাদের দিকে এগিয়ে যান এবং এক যুবককে তার গাড়ির কাছে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে কিছুটা আলাপ-আলোচনা করেন। এই ঘটনার পর, রাহুল গান্ধী হঠাৎ তার পকেট থেকে একটি টফি বের করে ওই যুবককে দেন। এটি ছিল এক অবাক করা দৃশ্য, যেখানে বিরোধী স্লোগান ও রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও রাহুল গান্ধী শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান।

এই ঘটনা একটি রাজনৈতিক পরিপক্কতা এবং মানবিকতার উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। রাহুল গান্ধী তার এই ছোট্ট ও মানবিক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে আন্তরিক সম্মান ও শিষ্টাচার বজায় রাখা সম্ভব। এটি সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয় এবং মিডিয়াও এই ঘটনায় রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক পরিপক্বতার প্রশংসা করেছে।

‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু হয়েছিল ১৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে এবং এর মূল উদ্দেশ্য হল বিহারে নির্বাচনী তালিকায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম মুছে ফেলার প্রতিবাদ করা, যাকে বিরোধী দলগুলি জনগণের ভোটাধিকারকে হরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। বিশেষভাবে, কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে যে এই তালিকা সংশোধন কার্যক্রমে মানুষের ভোটাধিকারকে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

রাহুল গান্ধী সম্প্রতি এক সমাবেশে অভিযোগ করেছেন, ‘‘বিজেপি নেতারা আতঙ্কিত, কারণ মোদী সরকার নির্বাচন কমিশনের সাহায্যে ভোট চুরি করার চেষ্টা করছে।’’ তাঁর এই বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের গত কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী দলের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে, ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাতিল করা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস ১ সেপ্টেম্বর পাটনায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই যাত্রার সমাপনী পর্বে যোগ দিচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য যশুফ পাঠান ও লালিতেশ পতি ত্রিপাঠী এই পদযাত্রায় প্রতিনিধিত্ব করবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের বিরোধী দলগুলির জোট ‘ইন্ডিয়া’ এর অংশ হিসেবে এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করবে এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে একযোগে কাজ করবে।

এই যাত্রা বিহারের নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে, বিশেষ করে সেখানে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ১ সেপ্টেম্বর পাটনায় বিশাল পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে, যা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে, কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল এই যাত্রাকে ‘ঐতিহাসিক আন্দোলন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘বিজেপির কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার রক্ষা করার জন্য এই যাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যাত্রা শুধু বিহারের ভোটাধিকার নিয়েই নয়, বরং ভারতের বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবেশ ও বিরোধী দলগুলির একতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।