লোকসভায় বিতর্কের মান কমছে, সংসদীয় কমিটিগুলোর সক্রিয় ভূমিকার ওপর জোর দিলেন স্পিকার ওম বিড়লা

ভুবনেশ্বর/নয়াদিল্লি, ৩০ আগস্ট : লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা সংসদ ও রাজ্য বিধানসভায় অধিবেশন সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বিতর্কের মান ক্রমাগত নিম্নগামী হওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, অর্থবহ বিতর্ক, শালীনতা ও সংলাপ ব্যতীত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি মানুষের বিশ্বাস ধাক্কা খাবে।

ভুবনেশ্বরে আয়োজিত “তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতির কল্যাণ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি ও রাজ্য কমিটির চেয়ারপার্সনদের জাতীয় সম্মেলনে” ভাষণ দিতে গিয়ে ওম বিড়লা বলেন, “সংসদে যতই দলীয় বিভাজন থাকুক না কেন, সংসদীয় কমিটিগুলি হলো এমন এক মঞ্চ, যেখানে দলমত নির্বিশেষে জনস্বার্থে কাজ হয়।”

এই সম্মেলন এবার প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লির বাইরে অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে দেশজুড়ে সংসদ ও রাজ্য পরিষদের প্রায় ১২০ জন প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিল। এবারের থিম ছিল: “সংসদীয় ও আইনসভা কমিটিগুলির ভূমিকা: তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন”।

ওম বিড়লা জানান, সংসদীয় কমিটিগুলি বাজেট যাচাই, কল্যাণ প্রকল্প পর্যালোচনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আইন তৈরিতে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। তিনি বলেন, “সংসদে যখন বিতর্ক দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন এই কমিটিগুলি একমাত্র জায়গা, যেখানে নিরপেক্ষভাবে জনস্বার্থে আলোচনার সুযোগ থাকে।”

তিনি ভাষার মান, আচরণ ও বিতর্কের গুণগত মানের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “যখন আলোচনা অর্থহীন হয়ে পড়ে, তখন গণতন্ত্র দুর্বল হয়। সংসদের কাজ শুধুমাত্র আবেগ নয়, এটি হওয়া উচিত সমাধান ভিত্তিক ও দায়িত্বশীল আলোচনা।”

ওম বিড়লা বলেন, “যে উন্নয়ন প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছায় না, তা অর্থহীন। ন্যায়বিচার, সমতা ও অধিকার প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি সরকারগুলিকে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বরাদ্দ বাজেট পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান এবং প্রকল্পগুলির কার্যকারিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক জানান, রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই এসসি/এসটি জনগোষ্ঠী। তাদের কল্যাণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজ্য সরকার ৬৮,৮৮১ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছে। তিন লক্ষ “বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনজাতি”-এর জন্য পিএম জনমন স্কিম চালু হয়েছে এবং ১৫টি একলব্য স্কুলে প্রায় পাঁচ লক্ষ ছাত্রছাত্রী শিক্ষা পাচ্ছে। এছাড়াও, তিনি ঘোষণা করেন, শীঘ্রই রাজ্যের স্কুল পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন উপজাতি ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

স্পিকার বিড়লা বলেন, “ক্ষমতায়ন মানে শুধু আর্থিক অনুদান নয়, এটি হওয়া উচিত সম্মান, সুযোগ ও আত্মনির্ভরতার ভিত্তি। প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন শুধু ন্যায়ের প্রশ্ন নয়, এটি জাতীয় অগ্রগতির পূর্বশর্ত।”

ওম বিড়লা সকল আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, “জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে রাজনীতি থেকে উপরে উঠে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, ভারতীয় গণতন্ত্র বরাবরই বিতর্ক এবং ঐকমত্যের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে।

এবারের সম্মেলন রাজধানীর বাইরে আয়োজন করায় তা প্রতীকীভাবে সংসদীয় কার্যক্রমকে প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস হিসেবেই দেখা হচ্ছে। দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।