নয়াদিল্লি/শিমলা/শ্রীনগর, ৩০ আগস্ট : ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ একাধিক রাজ্যে লাগাতার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন উত্তর-পশ্চিম ভারতের হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, দিল্লি ও তার আশেপাশের রাজ্যগুলিতে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। আজ উপকূলীয় কর্ণাটক, হিমাচল, পাঞ্জাব এবং উত্তরাখণ্ডে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশে বিচ্ছিন্ন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে আজ বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সবচেয়ে করুণ প্রভাব পড়েছে জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশে। জম্মু-কাশ্মীরে টানা বৃষ্টির কারণে ভূমিধস ও হঠাৎ প্লাবনে বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক টানা পাঁচদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশে ভূমিধস ও রাস্তা ধ্বসে পড়ার কারণে প্রায় ২০০০-এর বেশি গাড়ি আটকে পড়েছে। জ্বালানি, তরিতরকারি, এলপিজি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে একাধিক জেলায়। চেনানি ও উদমপুরের জাখাইনি এলাকার মধ্যে জাতীয় সড়কের একাধিক অংশে রাস্তা ধসে পড়েছে এবং বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন সচল করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও এখনও পর্যন্ত যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। নগরোটা থেকে রেয়াসি, চেনানি, পাটনিটপ, বানিহাল হয়ে শ্রীনগর পর্যন্ত কোনো গাড়ি ছাড়ার অনুমতি নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে মুঘল রোড ও কিশতওয়ার-সিন্থান-অনন্তনাগ রুটে সীমিতভাবে ছোট গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে আকস্মিক বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১ জন। রেয়াসি জেলার মাহোর এলাকার বাদ্দার গ্রামে একটি বাড়ি ধসে পড়লে একই পরিবারের সাতজন—এক দম্পতি এবং তাদের পাঁচ শিশু—পাহাড়ের মাটিচাপায় মৃত্যু হয়। রামবানের রাজগ্রাহ গ্রামে একটি স্কুলে ক্লাউডবার্স্টের ফলে প্রবল বন্যা ও ভূমিধস দেখা দিলে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে, একজন এখনও নিখোঁজ। রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১৬০ জনের বেশি মানুষ এই বর্ষা মরসুমে প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের অনেকেই ছিলেন তীর্থযাত্রী। দুর্গত এলাকাগুলিতে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং শিক্ষা দপ্তর ক্লাস ৯ থেকে ১২ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের নির্দেশ দিয়েছে, যেখানে সম্ভব।
অন্যদিকে হিমাচল প্রদেশে ভারী বর্ষণে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। একাধিক জেলায় সড়ক, বিদ্যুৎ, জল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শিমলা আবহাওয়া কেন্দ্র রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার জন্য অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে। আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। চাম্বা জেলার ভর্মৌর এলাকায় মনিমহেশ যাত্রায় আগত হাজার হাজার তীর্থযাত্রী বর্ষার কারণে আটকে পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ উদ্ধার কাজে নিযুক্ত রয়েছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ ৯৮১৬৬-৯৮১৬৬ এবং ০১৮৯৯-২২৬৯৫০ হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। রাজ্যে চলতি বর্ষায় এখন পর্যন্ত ৩১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পাশাপাশি, ৯০টিরও বেশি আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ, উত্তরকাশী, বাগেশ্বর ও টেহরি জেলার পরিস্থিতিও অত্যন্ত জটিল। এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি ও বাগেশ্বরে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। একমাত্র আশার খবর, গ্যাংগোত্রী হাইওয়ের একটি অংশ ২৫ দিন পর আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে, যা ত্রাণ পৌঁছানো ও উদ্ধার কাজে গতি আনবে। রাজ্যজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে, আজ থেকে শুরু হয়েছে তেলেঙ্গানা বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন। অধিবেশনের প্রথম দিনেই বিতর্কে আসছে কেলেশ্বরম লিফট ইরিগেশন প্রকল্প নিয়ে পিসি ঘোষ কমিশনের রিপোর্ট। রিপোর্টে মেডিগাড্ডা, অন্নারাম এবং সুন্দরিল্লা ব্যারাজগুলিতে গুরুতর গাফিলতির কথা বলা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও হাইকোর্টে মামলা করেছেন। বিরোধী দল বিএরএস এই প্রকল্প নিয়ে নিজেদের একটি পৃথক পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করার অনুমতি চেয়েছে বিধানসভায়। পাশাপাশি, সার সংকট, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ এবং স্থানীয় সংরক্ষণে ৪২% সংরক্ষণ নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একযোগে এতগুলি রাজ্যে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা অনুযায়ী পরবর্তী কয়েকদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সমস্ত জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

