ওয়াশিংটন, ২৮ আগস্ট: ভারত থেকে রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে শুধুমাত্র ভারতকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপে একদিকে আমেরিকানরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে দুই দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা ভারত-মার্কিন সম্পর্ককেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ডেমোক্র্যাট প্যানেল এক্স-এ লিখেছে, “চীন বা অন্যান্য দেশ যারা রাশিয়ান তেল অনেক বেশি পরিমাণে আমদানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে শুধুমাত্র ভারতকে টার্গেট করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় এটা আসলে ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, বরং কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রভাবিত সিদ্ধান্ত।”
একটি সংবাদ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জানায়, “যদি ট্রাম্প প্রশাসন সকল দেশের উপর সমানভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করত, তাহলে সেটা যুক্তিসঙ্গত হতো। কিন্তু শুধুমাত্র ভারতকে লক্ষ্য করার ফলে নীতিগত দিক থেকে এটি সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীন, যা রাশিয়ার বৃহত্তম তেল আমদানিকারক, আজও ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে এবং কম দামে তেল কিনে চলেছে।”
ডেমোক্র্যাটদের এই আক্রমণ এসেছে এমন সময়ে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে তেল ব্যবসার যুক্তিকে সামনে রেখে আগের ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। যার ফলে মোট শুল্ক এখন দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার অনুমান করছে, এই বাড়তি শুল্কের কারণে প্রায় ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সরকারের আশঙ্কা, এতে ভারতের রপ্তানি খাত বাণিজ্যিকভাবে অচল হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুইই ব্যাহত হতে পারে।
যদিও মোদী সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই চাপের কাছে নত হবেন না।
তবে মার্কিন প্রশাসন কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত—যেমন ওষুধ ও ইলেকট্রনিক্স—কে এই বাড়তি শুল্ক থেকে আপাতত ছাড় দিয়েছে, যা ভারতের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। তবে বাজার প্রবেশাধিকার ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন রয়ে গিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিকেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়নি। এর প্রধান কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাতে আরও বেশি প্রবেশাধিকার চাইছে, যা নিয়ে ভারত আপত্তি জানিয়ে আসছে।

