গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে সারা দেশে উদযাপন, মহারাষ্ট্রে শুরু হল জাঁকজমকপূর্ণ গণেশোৎসব

মুম্বই, ২৭ আগস্ট : আজ, ২৭ আগস্ট, সারা দেশে বিপুল উৎসাহ ও ভক্তিভরে পালিত হচ্ছে গণেশ চতুর্থী। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে আজ থেকে শুরু হয়েছে গণেশোৎসবের দশদিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপন। রাজ্যের সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে উৎসবের উচ্ছ্বাস ও ধর্মীয় আবেগের মেলবন্ধন। ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি অলিগলি। সনাতনী ঢাক-ঢোল, তাশা-পথকের ছন্দে শহরগুলোতে শুরু হয়েছে গণেশের আগমন শোভাযাত্রা। এই উৎসব আগামী এগারো দিন ধরে চলবে এবং অনন্ত চতুর্দশীর দিনে গণেশ প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।

মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বই-সহ বিভিন্ন শহরে এখন উৎসবের সাজে সেজে উঠেছে রাস্তাঘাট, মণ্ডপ ও বাসাবাড়ি। বিভিন্ন বিখ্যাত সার্বজনীন গণেশ মণ্ডল, যেমন লালবাগচা রাজা, গণেশ গলি, আন্দেরিচা রাজা এবং মুম্বইচা রাজা, ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ করেছে তাদের বিশালাকৃতির গণেশ প্রতিমা ও মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জা। এই সব মণ্ডপে আগামী দশদিন ধরে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় করবেন দর্শন ও পূজার জন্য। পাশাপাশি, বহু পরিবার নিজেদের বাসাবাড়িতেও ঘরোয়া পরিবেশে গণেশ ঠাকুরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রতিমা স্থাপন করছেন। বাজারগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। মুম্বইয়ের দাদার, লালবাগ, ক্রফোর্ড মার্কেটের মতো এলাকাগুলিতে উপচে পড়ছে ভক্তের ভিড়। ফুল, মিষ্টি, পূজার সামগ্রী, আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার সামগ্রী কিনতে ব্যস্ত ভক্তরা ভরিয়ে তুলেছেন বাজারগুলো।

এত বড় আকারের উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পুলিশ ও পুর প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ভিড় ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বড় মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী। রাস্তায় রাস্তায় চলছে ডোল-তাশার পরিবেশন, যা ভক্তদের মধ্যে বাড়িয়ে দিচ্ছে উৎসবের আমেজ।

পুদুচেরিতেও গণেশ চতুর্থী পালিত হচ্ছে মহা আড়ম্বরের সঙ্গে। বিখ্যাত মানাকুলা বিনায়গার মন্দিরে আজ ভোর ৪টা থেকেই শুরু হয়েছে বিশেষ অভিষেক। ভগবান বিনায়ককে সোনার বর্মে সজ্জিত করা হয়েছে এবং হাজার হাজার ভক্ত সেখানে ভোর হতেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দর্শনের জন্য। মন্দির প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা রক্ষার্থে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। একইসঙ্গে পুদুচেরির অন্যান্য বিনায়ক মন্দিরগুলিতেও আজ চলছে বিশেষ পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

গণেশ চতুর্থীর এই শুভদিনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে জানিয়েছেন আন্তরিক শুভেচ্ছা। রাষ্ট্রপতি এক বার্তায় বলেন, গণেশ চতুর্থী হলো জ্ঞান, বুদ্ধি ও শুভারম্ভের প্রতীক, এই দিনে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ভগবান গণেশের আশীর্বাদে দেশের প্রতিটি নাগরিক ও জাতি এগিয়ে যাবে উন্নয়নের পথে। পাশাপাশি, তিনি পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন ও আত্মনির্ভর ভারতের প্রতি প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই পবিত্র দিনটি সবার জীবনে সুখ, শান্তি ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে আসুক। তিনি প্রার্থনা করেন, ভগবান গণেশের কৃপায় দেশবাসীর জীবনে আসুক শুভতা ও সমৃদ্ধি।

গণেশ চতুর্থী শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভারতীয় সমাজের ঐক্য, সংস্কৃতি ও ভক্তির এক অনন্য প্রকাশ। এই উৎসব একদিকে যেমন আত্মিক পরিতৃপ্তি দেয়, অন্যদিকে তেমনি সমাজে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে।