নয়াদিল্লি, ২৫ আগস্ট: ভারতীয় ক্রিকেট দলের শীর্ষ স্পনসর হিসেবে ড্রিম১১ আর থাকছে না। সদ্য পাস হওয়া “অনলাইন গেমিং প্রচার ও নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০২৫” এর প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার বিসিসিআই এক সরকারি বিবৃতিতে জানায়, তারা ড্রিম১১-এর সঙ্গে চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন কোনও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যাদের মূল ব্যবসা অনলাইন গেমিং ঘিরে।
মাত্র দুই সপ্তাহ পরই সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। তার আগে ভারতীয় দল এখন স্পনসরশূন্য। বিসিসিআই-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ড্রিম১১-এর প্রতিনিধিরা মুম্বইয়ে বিসিসিআই অফিসে এসে সিইও হেমাঙ্গ আমিনকে জানিয়ে দেন যে, তাঁরা আর স্পনসর হিসেবে থাকতে পারবেন না। এর ফলে এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের জার্সিতে কোনও টাইটেল স্পনসর থাকবে না।”
এই সিদ্ধান্তের ফলে বিসিসিআই দ্রুত একটি নতুন টেন্ডার জারি করবে বলেও জানানো হয়েছে। যদিও চুক্তিভঙ্গের জন্য ড্রিম১১-এর বিরুদ্ধে কোনও আর্থিক জরিমানা আরোপ করা হবে না, কারণ চুক্তির এক ধারায় বলা আছে—সরকারি আইন পরিবর্তনের ফলে যদি সংস্থার মূল ব্যবসায়িক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তারা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য নয়।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ড্রিম১১ বর্তমানে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি সংস্থা। তারা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে এডটেক সংস্থা বাইজুসকে প্রতিস্থাপন করে বিসিসিআই-এর প্রধান স্পনসর হয়। তিন বছরের জন্য ৩৫৮ কোটি টাকার এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় দলের জার্সিতে ড্রিম১১-এর লোগো ব্যবহার করা হচ্ছিল।
শুধু ভারতীয় ক্রিকেট দলই নয়, ড্রিম১১-এর উপস্থিতি আছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, এবং একাধিক বিদেশি ক্রিকেট লিগে। ২০২০ সালে তারা চীনা সংস্থা ভিভো-কে প্রতিস্থাপন করে আইপিএল ট্রফির স্পনসর হয়। তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডারদের তালিকায় রয়েছেন এমএস ধোনি, রোহিত শর্মা, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পান্ডিয়া ও জসপ্রীত বুমরাহ।
ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবল, হকি ও কাবাডির মতো খেলাতেও ড্রিম১১-এর উপস্থিতি আছে। তারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগ, প্রো কাবাডি লিগ, এবং আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন-এর সঙ্গেও যুক্ত।
ড্রিম১১-এর সরে দাঁড়ানোর ফলে ভারতীয় বোর্ড দ্রুত নতুন স্পনসর খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। বিসিসিআই ইতিমধ্যেই নতুন টেন্ডার ড্রাফ্ট করছে বলে জানা গিয়েছে। তবে আগামী বড় টুর্নামেন্টে, যেমন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ ২০২৫-এর আগে নতুন স্পনসর পাওয়া বিসিসিআই-এর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং অনলাইন গেমিং সংস্থার মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আচমকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে এই ঘটনা। সরকার নতুন বিল পাশ করায় অনলাইন গেমিং সংস্থাগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিসিসিআই-এর নতুন স্পনসর কে হয় এবং কতটা টাকার চুক্তিতে—তা এখন ক্রিকেট প্রেমীদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।

