বেঙ্গালুরু, ২২ আগস্ট : কর্ণাটক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া শুক্রবার বিধানসভায় বলেন, ৪ জুন বেঙ্গালুরুর আইপিএল জয় উদযাপন চলাকালীন ঘটে যাওয়া স্ট্যাম্পিডে ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও, ভারতে এমন ঘটনায় কখনও কোনও নেতা দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেননি। এ ধরনের দুর্ঘটনা ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে ঘটেছে। এই মন্তব্যের পর বিরোধী দল বিজেপি এবং জেডিএস-এর বিধায়করা বিরোধী দলনেতা আর. অশোকের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন।
-কর্ণাটক বিধানসভায় শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ৪ জুন বেঙ্গালুরুর আইপিএল জয় উদযাপন চলাকালীন ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক স্ট্যাম্পিড দুর্ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এই দুর্ঘটনায় ১১ জন তরুণ প্রাণ হারান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এমন দুঃখজনক ঘটনা অতীতে ভারতে বহুবার ঘটেছে, কিন্তু কোনো মুখ্যমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতা কখনও পদত্যাগ করেননি। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন এবং মৃত্যুর খবর বিকেল ৫.৩০টার পর জানতে পারেন। সেই সময় তিনি নাতির সঙ্গে ডোসা খেতে গিয়েছিলেন এবং আরসিবি খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন। সিদ্দারামাইয়া আরও জানান, মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর তিনি হাসপাতালে গিয়ে দেহগুলি দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রিয়াল তদন্তের নির্দেশ দেন, পরবর্তীতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে অতীতের নানা স্ট্যাম্পিডের উদাহরণ তুলে ধরেন, যেমন ২০০৮ সালের হিমাচলের নৈনাদেবী মন্দিরে ১৬২ জনের মৃত্যু, রাজস্থানের চামুন্ডাদেবী মন্দিরে ২৫০ জন এবং মধ্যপ্রদেশ, হাথরাস ও প্রয়াগরাজে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডিগুলির কথা তুলে ধরে বলেন, সেগুলির সময়ও বিজেপির সরকার ছিল, কিন্তু কারও পদত্যাগের নজির নেই। আন্তর্জাতিক উদাহরণ হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডের শেফিল্ড স্টেডিয়ামের ১৯৮৯ সালের দুর্ঘটনা, ২০১৩ সালে আমেরিকা এবং ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, কোভিডকালে গুজরাটে আইপিএল ট্রফি উদযাপনে অমিত শাহ ও গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী অংশ নেন, অনুষ্ঠানও হয়, কিন্তু তখন কোনও তদন্ত বা ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এমনকি কর্ণাটকের চামারাজনগরে কোভিডে অক্সিজেনের অভাবে ৩৬ জন মারা গেলেও কেউ দায় নেয়নি।
দায়িত্ব সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাঁচজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, যদিও পুলিশ অনুষ্ঠান অনুমোদন দেয়নি, তবু লিখিত নিষেধাজ্ঞাও জারি করেনি। আরসিবি ও কেএসসিএ –এর করা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলির মাধ্যমে প্রচুর ভিউ পেয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তা না থামিয়ে উল্টো আয়োজকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে। তিনি বলেন, শুধু ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়, ন্যায় তখনই হবে যখন দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আরসিবি, ডিএনএ ও কেএসসিএ–র বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস রুজু হয়েছে এবং সিআইডি তদন্ত করছে।
বিরোধী দলনেতা আর. অশোক প্রশ্ন তোলেন, সরকার অনুমতি না দিলে অনুষ্ঠান হল কীভাবে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠান সঠিক লাইসেন্স ছাড়াই হয়েছিল। এরপর অশোক জানতে চান, তাহলে ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী শিবকুমার কীভাবে অবৈধ অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন, যার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি জানতেন না। ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী পরে ব্যাখ্যা দেন, পুলিশ বিভাগের অনুরোধে তিনি অনুষ্ঠান দ্রুত শেষ করার জন্য গিয়েছিলেন।
পুলিশ মোতায়েন নিয়ে বিতর্কে বিজেপি নেতা আরগা জ্ঞানেন্দ্র প্রশ্ন করেন, কেন ১৫-১৬ হাজার রিজার্ভ পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি? অশোক বলেন, কেবল ১৯৪ জন পুলিশ ছিলেন, যার পাল্টা উত্তর মুখ্যমন্ত্রী দেন যে ৫১৫ জন মোতায়েন ছিল, তবে ১৯৪ জনই সই করেছেন। বিতর্ক চরমে পৌঁছালে বিরোধী দল অভিযোগ তোলে, মুখ্যমন্ত্রী শুধু দুঃখপ্রকাশ করছেন, কিন্তু ক্ষমা চাইছেন না এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। এর প্রতিবাদে বিজেপি ও জেডিএস বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।
উল্লেখযোগ্য, এই দুর্ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন কিশোর ও তরুণ, এবং তাঁদের পরিবার এখনও বিচার ও দায়িত্ব নির্ধারণের আশায় দিন কাটাচ্ছেন। তদন্ত বর্তমানে সিআইডি -এর অধীনে চলমান।

