শ্রীনগর/নয়াদিল্লি, ২১ আগস্ট : সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশনার পর জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় পুলিশ হেফাজতে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় ৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) আইজাজ আহমদ নাইকু এবং ইন্সপেক্টর রিয়াজ আহমদ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুরশিদ আহমদ চৌহান নামের এক পুলিশ সদস্যকে বেআইনিভাবে আটক করে তিন দিন ধরে অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সুপ্রিম কোর্ট মামলাটিকে “ভারতের পুলিশি ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস ঘটনা” বলে আখ্যায়িত করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, চৌহানের যৌনাঙ্গ সম্পূর্ণরূপে বিকৃত করা হয়, যা কোনোভাবেই আত্ম-আঘাত হিসেবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর মেডিকেল রিপোর্টেও এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঘটনার পর পুলিশ দাবি করে, চৌহান আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে আদালত এই থিয়োরি সরাসরি খারিজ করে জানায়, “কেউ নিজেই নিজের অণ্ডকোষ ছিন্ন করবে, এমন ধারণা একেবারেই অযৌক্তিক ও অবাস্তব।”
এই মামলায় জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টকেও তীব্র ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, হাইকোর্ট একটি গুরুতর আইনগত ভুল করেছে যখন তারা অভিযুক্ত এসএসপি-কেই তদন্তের দায়িত্ব দেয়, যার অধীনে এই নির্যাতন ঘটেছে। আদালতের মতে, এটি “প্রাকৃতিক বিচারবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছানোর পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন নির্যাতিত পুলিশ সদস্য খুরশিদ আহমদ চৌহানের স্ত্রী। স্থানীয় প্রশাসন এবং হাইকোর্টে বিচার না পেয়ে তিনি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন, যেখানে তার আবেদন আমলে নিয়ে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং গ্রেপ্তারের পথ সুগম করে।
সিবিআই ইতিমধ্যে ৬ জন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে FIR রুজু করেছে এবং তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া অনেক সময় বিচার পাওয়া সাধারণ নাগরিকের পক্ষে সম্ভব হয় না, বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রের নিজের সংস্থাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

