আগরতলা, ১৮ আগস্ট : তিপরা মথা বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মার চিঠি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে গোটা রাজ্যে। যে সব জনজাতি যুবতী ভিন্ন জাতির যুবকদের বিবাহ করেছে, ওই সব জনজাতি যুবতীদের সমস্ত ধরনের এসটি সুবিধা বাতিল করার আবেদন জানিয়ে আজ জাতীয় তপশিলি উপজাতি কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। আর তাতেই গোটা রাজ্যে এই বিষয়ে শোরগোল পড়ে গেছে।
চিঠিতে বিধায়ক অভিযোগ করেছেন যে, জনজাতি যুবতীদের নিয়ে করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে অ- জনজাতি অথবা ভিন্ন জাতির যুবকরা। সরকারি ট্যাক্স থেকে শুরু করে এডিসি এলাকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাগুলো জনজাতি স্ত্রীর নামে নিয়ে ভোগ করছেন ভিন্ন জাতির যুবকরা। এমনটাই অভিযোগ করেছেন তিপ্রা মথা বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। তাঁর এই নজিরবিহীন দাবিতে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
বিধায়ক জাতীয় তপশিলি উপজাতি কমিশনের চেয়ারপার্সনকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ” বহু ভিন্ন জাতির যুবকরা ইচ্ছাকৃতভাবে তফসিলি জনজাতি (এসটি) কন্যাদের সাথে বিবাহ করছে শুধুমাত্র সরকারের বৈধ কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর বরপক্ষ তাঁদের সম্পত্তি কনের নামে স্থানান্তর করছে, যাতে করে সরকারি কর প্রদানের দায় এড়িয়ে যাওয়া যায়।”
উদাহরণস্বরূপ বিধায়ক উল্লেখ করেন, “অনেক বর তাদের পেট্রোল পাম্প, গ্যাস এজেন্সি, রেশন দোকান এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে তফসিলি উপজাতি (এসটি) স্ত্রীর নামে করে ফেলছে, শুধুমাত্র সরকারী কর এড়ানোর জন্য।
তারা কেন্দ্রীয় সরকার এবং ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি ভোগ করছে। তারা উপজাতি কনের নামে জমি ক্রয় করছে এবং ভূমি কর এড়িয়ে যাচ্ছে। এসব জমি তারা কোনো প্রকার কর না দিয়ে কিনছে এবং টি টিএএডিসি এলাকার অন্তর্গত বনভূমি উজাড় করছে।”
চিঠিতে তিনি আরো বলেন, “সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ভিন্ন জাতির ছেলেরা টিটিএএডিসি এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করছে এবং সেখানে উদ্যান, রাবার বাগান তৈরি করছে। তারা ইটভাটা চালাচ্ছে এবং এসব বিবাহের মাধ্যমে পাওয়া সুবিধার কারণে সরকারি কর থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতেও একইভাবে তারা এসব সুবিধা নিয়ে কর এড়াচ্ছে।
বিধায়ক বলেন, এই ধরনের কার্যকলাপের কারণে রাজ্যের তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার ও সুবিধাগুলি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। প্রকৃত জনজাতি পরিবারগুলি সরকারের কাছ থেকে যে সকল সুবিধা পাওয়ার কথা, সেগুলি অ-জনজাতি ব্যক্তিরা অন্যায়ভাবে দখল করছে। এর ফলে সরকারও বৈধ করের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং ত্রিপুরার জনজাতি সমাজ আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।
তাই যেসকল জনজাতি যুবতিরা অ-জনজাতিদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে তাঁদের সকল সরকারি সুবিধা ও অধিকার বাতিল করার জন্য জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশন যেন অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার আবেদন করেন বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। বিধায়কের এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
জনজাতি মহিলাদের স্বাধীনতা, তাদের সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই চিঠির ভিত্তিতে। অ- জনজাতি যুবককে বিবাহ করলেই তাদের সাংবিধানিক অধিকার গুলি ক্ষুন্ন হবে, তা নিয়ে রাজ্যের সম্প্রীতির পরিবেশে বিভাজন শুরু হতে পারে বলে মনে করছে তথ্যবিজ্ঞ মহল। এটি রাজ্যের জাতি জনজাতির মধ্যে শান্তি সম্প্রীতির আবহকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

