নতুন দিল্লি, ১৮ আগস্ট : ভারতের নির্বাচন কমিশন বিহারের বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার পর ১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা থেকে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, সেই ৬৫ লক্ষ ভোটারের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকাটি বিহার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুথ লেভেল অফিসার-রা রাজনৈতিক দলগুলির নিযুক্ত বুথ লেভেল এজেন্ট, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় ওই তালিকা প্রস্তুত করেছেন। মূলত যাঁরা ভোটার স্লিপ পাননি, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলেই জানানো হয়েছে। তালিকাটিতে বাদ পড়া ভোটারদের নাম, এপিক নম্বর, আত্মীয়ের নাম ও সম্পর্কের ধরন, পুরনো পার্ট নম্বর ও সিরিয়াল নম্বর, বয়স, লিঙ্গ এবং বাদ পড়ার কারণ বিশদে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ যদি এই তালিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট হন, তবে তিনি নিজের আধার কার্ডের অনুলিপিসহ দাবি বা আপত্তি জানাতে পারেন।
এই পদক্ষেপটি সুপ্রিম কোর্টের একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশের পর গৃহীত হয়। সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয় যে, বিহারের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম এবং তাঁদের বাদ যাওয়ার কারণ প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার ৫৬ ঘণ্টার মধ্যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং তিনি বিহারের ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলিকে বাকি থাকা ১৫ দিনের মধ্যে দাবি ও আপত্তি জানাতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ১ সেপ্টেম্বরের পর কোনও ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে সংশোধনের চেষ্টা করার কোনও মানে হবে না।
স্যার প্রক্রিয়া শুরু করার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, গত দুই দশক ধরে সমস্ত রাজনৈতিক দলই ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবির ভিত্তিতেই প্রথমে বিহার থেকে স্যার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং অন্যান্য নির্বাচনী রাজ্যগুলিতে এই প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে, তা “উপযুক্ত সময়ে” জানানো হবে বলে সিইসি মন্তব্য করেন। বিরোধী দলগুলির তরফে ভোট চুরির যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাকে উড়িয়ে দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, ভোটার, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এবং বিএলও-রা মিলে মাঠপর্যায়ে স্বচ্ছ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশে কাজ করছেন এবং প্রক্রিয়াটিকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন স্বাক্ষর ও ভিডিও টেস্টিমোনিয়ালের মাধ্যমে। কমিশনের অভিযোগ, জেলা সভাপতি ও বুথ লেভেল এজেন্টদের এই অনুমোদন রাজ্য ও জাতীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
ভোটার তালিকায় একাধিক ভোটারের একই ঠিকানায় নাম থাকার অভিযোগ সম্পর্কে সিইসি বলেন, অনেক পঞ্চায়েত ও পৌরসভা এলাকায় ঠিকানার নির্দিষ্ট নম্বরকরণ না থাকায় এবং বেআইনি বসতির কারণে “শূন্য” বা কাল্পনিক ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা একটি পুরনো এবং স্বীকৃত পদ্ধতি। তিনি বলেন, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে—১৯৬৬ সালের অসম, ১৯৮০ সালের রাজস্থান ও ১৯৮৫ সালের উত্তরপ্রদেশের ভোটার তালিকায়ও বাড়ি নম্বর ‘০১’ বা ফাঁকা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে এই ভোটার তালিকার সংশোধন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কমিশন চায় যাতে কোনও প্রকৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়েন এবং তালিকা থাকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নির্ভুল।

