ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের আগে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক

ব্রাসেলস/লন্ডন/কিয়েভ, ১৩ আগস্ট : আসন্ন ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আগে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় নেতারা বুধবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো একতরফা শান্তি চুক্তিতে না পৌঁছান, তা নিশ্চিত করা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মেরজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো মহাসচিব অংশ নেবেন। বৈঠকটি ১২০০ জিএমটি-তে শুরু হবে বলে জানিয়েছে জার্মান সরকার।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই বৈঠককে তিনি একটি “শোনার প্রক্রিয়া” হিসেবে অভিহিত করেছেন। যদিও তিনি সম্প্রতি বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে কিয়েভ এবং মস্কো—উভয় পক্ষকেই কিছু জমি ছাড় দিতে হবে। ইতোমধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। এই অবস্থায় ইউরোপীয় নেতারা শঙ্কিত যে, ট্রাম্প ও পুতিন এমন কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন, যা ইউক্রেন বা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

পূর্ব ইউরোপের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে এমন কিছু না ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এবং ইউরোপীয় পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আমরা কাজ করছি।” মার্কিন এক সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প ইউক্রেন ও ইউরোপকে উপেক্ষা করে সরাসরি পুতিনের সঙ্গে একটি চুক্তির চেষ্টা করতে পারেন, যদিও এর ফলে ইউক্রেন ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, আলাস্কার বৈঠক হবে মূলত একটি “শোনার অধিবেশন”, যেখানে ট্রাম্প বোঝার চেষ্টা করবেন শান্তিচুক্তির পথে কী কী প্রয়োজন।

জেলেনস্কি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার সম্ভব নয়, কারণ এটি ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যূহ। তার মতে, যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বা ভূখণ্ড নিয়ে কোনো আলোচনাই সম্ভব নয়। এদিকে রাশিয়ান বাহিনী মাঠ পর্যায়ে আক্রমণ জোরদার করেছে এবং পূর্বাঞ্চলের পোকরভস্ক ও কোস্তিয়ানতিনিভকা শহরের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করছে।

বুধবারের মূল বৈঠকের পর ১৩০০ জিএমটি-তে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলাদা একটি বৈঠক করবেন। এরপর ১৪৩০ জিএমটি-তে “কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং” নামে একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনকে সহায়তার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।

এক সাম্প্রতিক গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ ইউক্রেনীয় দ্রুত শান্তিচুক্তির পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তারা একমত যে, এটি কোনোভাবেই অত্যধিক ছাড় দিয়ে অর্জিত হওয়া উচিত নয়। ইউক্রেন চায়, শান্তি স্থাপনের আগে যুদ্ধ থামানো হোক এবং তারপরে সুরক্ষিত আলোচনার পথ তৈরি হোক।