‘আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত’ — ভোট জালিয়াতি নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ, পদত্যাগ করলেন কর্নাটকের মন্ত্রী কে.এন. রাজন্না

নয়াদিল্লি, ১১ আগস্ট – কর্নাটকে ভোটার তালিকা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে নিজের দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই সরব হওয়ার পর পদত্যাগ করলেন সহযোগিতা ও মাইনর ইরিগেশন মন্ত্রী কে.এন. রাজন্না। সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের উচ্চ নেতৃত্বের চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় কয়েকদিন আগে, যখন রাজন্না প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন যে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময়ই ভোটার তালিকা প্রস্তুতের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ঘটেছে। তাঁর দাবি, দলের পক্ষ থেকে সময়মতো আপত্তি তোলা বা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মহাদেবপুরা কেন্দ্রে একজন ভোটারের তিনটি আলাদা নাম নিবন্ধন এবং ভোটদানের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ধরনের অনিয়ম চোখের সামনে ঘটেছে, অথচ আমরা নীরব থেকেছি — আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।”

রাজন্নার বক্তব্যে স্পষ্ট, তাঁর অভিযোগ কেবল বিজেপি বা বিরোধীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং নিজের দলের নীরবতাকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “ড্রাফ্ট ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়ই আপত্তি তোলা দরকার ছিল। সেটাই দলের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তখন আমরা কিছু বলিনি, আর এখন কথা বলছি।”

এই মন্তব্যে চরম অস্বস্তিতে পড়ে কর্নাটক কংগ্রেস। উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার প্রকাশ্যে বলেন, রাজন্না “সম্পূর্ণ ভুল” করেছেন এবং দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। সূত্রের দাবি, এরপরই হাই কমান্ডের নির্দেশে রাজন্নাকে পদ ছাড়তে হয়। যদিও তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিজের নীতি ও বিশ্বাসের কারণেই পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে, রাজন্নার এই পদত্যাগ কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিকভাবে আরও চাপে ফেলে দিল, কারণ একই সময়ে জাতীয় স্তরে দল ভোট জালিয়াতি ইস্যুতে সরব। দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রতিবাদ মিছিল করেন। সেখানে রাহুল গান্ধী বলেন, “এটি আমার লড়াই ‘ওয়ান ম্যান, ওয়ান ভোট’-এর জন্য। নির্বাচন কমিশনের ডেটা থেকেই প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই শপথনামায় সই করার প্রয়োজন নেই।”

প্রসঙ্গত, বিজেপি রাহুলের “ভোট চুরি” মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তাঁকে নাৎসি প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের সঙ্গে তুলনা করেছে। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস ইস্যুটিকে রাজনৈতিক সুবিধা তোলার জন্য ব্যবহার করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কর্নাটকে রাজন্নার পদত্যাগ দলীয় ভেতরের অসন্তোষ ও বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা আসন্ন নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কংগ্রেস কীভাবে এই দ্বন্দ্ব মেটায় এবং ভোটারদের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করে।