কলকাতা | ৬ আগস্ট : ভারতীয় আবহাওয়া দফতর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস জারি করেছে। কেরালা এবং তামিলনাড়ুর ঘাট অঞ্চলের জন্য আগামী দুই দিনের জন্য জারি হয়েছে লাল সতর্কতা । একাধিক রাজ্যে বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বন্যা এবং ভূমিধসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
আইএমডি জানিয়েছে, দক্ষিণ ভারতের কেরালা এবং তামিলনাড়ুর পার্বত্য অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। লাল সতর্কতা জারি করে রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য ভূমিধস এবং নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল।
বিশেষ করে বিহারে পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল আকার নিচ্ছে। আইএমডি জানিয়েছে, রাজ্যের পশ্চিম চম্পারণ, পূর্ব চম্পারণ, শেওহার, গোপালগঞ্জ এবং সিওয়ান জেলায় টানা পাঁচদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে। ওইসব জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
গণ্ডক, কোসি, মহানন্দা এবং আধওয়ারা নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা জোরালো। জেলা প্রশাসনকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে এবং ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল মোতায়েনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে আগামীকাল বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি জানিয়েছে, রায়ালসীমা ও কর্ণাটকের দক্ষিণ অভ্যন্তরীণ এলাকাতেও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে।
উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশে ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। আগামী দিনে পাহাড়ি রাস্তাগুলি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পর্যটকদের আপাতত সেইসব এলাকায় ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।
উত্তরপ্রদেশের ২১টি জেলা, যেমন অউরাইয়া, বারাণসী, প্রয়াগরাজ, মির্জাপুর, গাজীপুর এবং বলিয়া বন্যার কবলে। গঙ্গা নদী একাধিক জেলায় বিপদসীমার উপরে বইছে, সেইসঙ্গে ইয়মুনা ও বেতওয়া নদীও জল বাড়াতে শুরু করেছে।
প্রয়াগরাজে টানা বৃষ্টির কারণে গঙ্গা ও ইয়মুনার জল প্রবলভাবে বেড়েছে। শহরের আশপাশের ২০০টি গ্রাম এবং প্রায় ৬০টি বসতি জলের তলায় চলে গিয়েছে। বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মধ্যপ্রদেশের গুনা ও শিবপুরী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। টানা বর্ষণের কারণে নদ-নদীর জল বেড়ে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। বহু এলাকা জলমগ্ন। রাজ্য সরকার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পাঠিয়েছে এবং উদ্ধারকার্য চলছে।
দিল্লি এবং এনসিআর অঞ্চলে ৮ আগস্ট পর্যন্ত আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। এই সময়ে হালকা বৃষ্টিপাত ও বজ্রবিদ্যুতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ১–২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২–৩৩°C এবং সর্বনিম্ন ২৫–২৬°C, যা এই সময়ে স্বাভাবিক বলেই ধরা হয়। বাতাসের গতি ছিল ১৬ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়েছে।
দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের জন্য ৬ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ৬ আগস্ট সকাল থেকে হালকা বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২–৩৪°C এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪–২৬°C থাকবে। বাতাসের গতি সকালবেলা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১২ কিমি/ঘণ্টা এবং বিকেলে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ১৬ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত প্রবাহিত হবে। ৭ আগস্ট হালকা বৃষ্টিপাত বা বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, তাপমাত্রা ৩৩–৩৫°C এর মধ্যে থাকবে এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪–২৬°C থাকবে। বাতাসের গতি সারাদিন দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসবে, তবে তা ধীরে ধীরে কমতে পারে। ৮ আগস্টও হালকা বৃষ্টিপাত বা বজ্রপাত হতে পারে এবং তাপমাত্রা ৩৩–৩৫°C এর মধ্যে থাকবে। সেই সঙ্গে বাতাসের গতি সকাল এবং বিকেলে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কমে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে বজ্রপাত চলাকালীন গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন না হলে নিরাপদে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু উত্তর দিকে সরে যাওয়ায় বিহার এবং উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বর্ষার গতি বাড়ছে। স্কাইমেট নামক বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা জানাচ্ছে, গত ১২ বছরে এই প্রথম জুন ও জুলাই মাসে গড়ের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
দেশের একাধিক রাজ্যে বৃষ্টিপাত এবং তার ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলছে। নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বারবার সতর্ক থাকার এবং সরকারি নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বন্যা বা ভূমিধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে যথেষ্ট সচেতনতা বজায় রাখা আবশ্যক।
এই অবস্থায় বর্ষাকালীন পরিকল্পনা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

