মধ্যপ্রদেশে ফের বর্বরতা: বন্ধুর সামনেই দলিত মহিলাকে গণধর্ষণ, নৃশংসতার শিকার

ভোপাল, ৬ আগস্ট : মধ্যপ্রদেশে দলিত মহিলাদের উপর বর্বরতার আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা সামনে এসেছে। সিধি জেলার চুরহাট বনাঞ্চলে এক তরুণী দলিত মহিলাকে পাঁচজন দুষ্কৃতকারী দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। তার পুরুষ বন্ধুকে আটকে রেখে এই নৃশংস অপরাধ সংঘটিত হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই মহিলা তার বন্ধুর সাথে ঘুরতে এবং ছবি তুলতে জঙ্গলে গিয়েছিলেন। সেখানেই পাঁচজনের একটি দল তাদের উপর হামলা চালায়। দুষ্কৃতকারীরা প্রথমে মহিলার বন্ধুকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং তারপর মহিলাকে টেনে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে যায়।

গণধর্ষণের শিকার হওয়ার সময় ওই মহিলা করুণার জন্য কাতরভাবে অনুরোধ করেন, এমনকি অভিযুক্তদের পায়ে ধরেও তিনি ক্ষমা চান। কিন্তু দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি। দুই জন অভিযুক্ত মহিলার বন্ধুকে বেঁধে রাখে এবং বাকি তিনজন তাকে গণধর্ষণ করে। এই জঘন্য অপরাধের পর দুষ্কৃতকারীরা তাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং ঘটনাটি প্রকাশ করলে দু’জনকেই মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।

অসহায় অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে ওই মহিলা দুপুর আড়াইটার দিকে কোনোমতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে একটি নির্মাণস্থলে পৌঁছান। সেখানে তিনি শ্রমিকদের কাছে তার ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানান। পরে স্থানীয় সরপঞ্চের স্বামী দলবীর সিং গোন্ডের সাহায্যে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে এবং জঙ্গলের ভিতরে রক্তমাখা তোয়ালে ও ধস্তাধস্তির চিহ্ন খুঁজে পায়। পুলিশ দল রাতভর আশেপাশের গ্রামগুলিতে সন্দেহভাজনদের খোঁজে তল্লাশি চালায়।

জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই ঘটনাকে “জঘন্য” বলে মন্তব্য করে বলেন যে, তাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো ওই মহিলার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এলাকার দুর্গমতা এবং সিসিটিভি ক্যামেরার অভাবে তদন্তে বিলম্ব হলেও, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে অপরাধীদের দ্রুত ধরা হবে এবং কঠোরতম আইনি বিধান অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। পুলিশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে, তবে এখনো কোনো গ্রেপ্তারি হয়নি।

উল্লেখ্য, এই বর্বরোচিত ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক আরিফ মাসুদের একটি প্রশ্নের জবাবে মধ্যপ্রদেশ সরকার দলিত এবং আদিবাসী মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে, রাজ্যে দলিত এবং আদিবাসী মহিলাদের বিরুদ্ধে ৭,৪১৮টি ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে, যা প্রতিদিন গড়ে সাতটি ধর্ষণের সমান। একই সময়ের মধ্যে, ৩৩৮টি গণধর্ষণ এবং ৫৫৮টি দলিত ও আদিবাসী মহিলাকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৩৮% এই দলিত এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত।