শিবু সোরেন প্রয়াত, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ, হাসপাতালে গিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ৪ আগস্ট : ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা, রাজ্যসভার সাংসদ এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন আজ প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোক প্রকাশ করেছেন। এদিনই প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

তাঁর পুত্র ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এক্স-এ পিতার মৃত্যুর খবর ভাগ করে লেখেন, “আমাদের প্রিয় ‘দিশোম গুরুজি’ আর নেই। আজ আমি সবকিছু হারালাম।”

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা শিবু সোরেন আটবার লোকসভায় নির্বাচিত হন এবং দু’বার রাজ্যসভার সদস্য হন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় দফার রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন।

সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্ত শিবু সোরেন তৎকালীন বিহারের অন্তর্গত রামগড় জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বামপন্থী শ্রমিক নেতা একে রায় ও কুরমি নেতা বিনোদ বিহারী মাহাতোর সঙ্গে ১৯৭২ সালে গঠন করেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। রাজ্য গঠনের আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। যার ফলস্বরূপ ২০০০ সালে গঠিত হয় নতুন রাজ্য ঝাড়খণ্ড।

১৯৮০ সালে তিনি প্রথমবারের মতো লোকসভায় নির্বাচিত হন দমকা আসন থেকে। পরবর্তীতে যা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হয়ে ওঠে। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি দমকা আসনে বিজেপি প্রার্থী নলিন সোরেনের কাছে প্রায় ৪৫,০০০ ভোটে পরাজিত হন।

২০০৫ সালে তিনি প্রথমবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হন। কিন্তু বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে মাত্র ৯ দিন পরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। শিবু সোরেনের প্রয়াণে রাজ্য তথা দেশের রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হল। তাঁর অবদান এবং নেতৃত্ব যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এক্স-এ শোকবার্তায় তিনি বলেন, শিবু সোরেনজির প্রয়াণ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক বড় ক্ষতি। রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, তিনি আদিবাসী পরিচয় ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গঠনের দাবিতে দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম করেছিলেন। শিকড় থেকে উঠে এসে তিনি শুধু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আরও লেখেন, মানুষের কল্যাণ, বিশেষ করে আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। আমি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পুত্র হেমন্ত সোরেন, তাঁর পরিবারবর্গ এবং অনুরাগীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের প্রয়াণে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আদিবাসী সমাজ, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উন্নয়নের প্রতি শ্রী সোরেনের অঙ্গীকারকে স্মরণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী এক্স-এ এক শোকবার্তায় লেখেন, শ্রী শিবু সোরেনজি ছিলেন এক মাটি-মাটির নেতা, যিনি জনজীবনের নানা পর্যায় পেরিয়ে মানুষের প্রতি অটুট নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তিনি বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রয়াণে আমি ব্যথিত। তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি রইল আমার সমবেদনা। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথা বলে শোকপ্রকাশ করেছি। ওম শান্তি।

এদিকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনজির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স -এ পৃথক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী লেখেন, শিবু সোরেনজিকে শ্রদ্ধা জানাতে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে। হেমন্তজি, কল্যাণজী এবং শিবু সোরেনজির সকল অনুরাগীর প্রতি রইল আমার সমবেদনা।