নোয়িদা, ৩১ জুলাই : নোয়িদায় একটি সংবাদ চ্যানেল, তিনজন সমাজবাদী পার্টির কর্মী এবং এক মুসলিম মৌলানার বিরুদ্ধে শান্তির অবজ্ঞা এবং অপমানজনক আচরণের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল যখন মৌলানা সাজিদ রশিদি সম্প্রতি এমপি ডিম্পল যাদবের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন এবং সেই মন্তব্যের পর স্টুডিওর মধ্যে তাকে চড় মারা হয়।
সংবাদ চ্যানেলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, মৌলানা সাজিদ রশিদি, যিনি সম্প্রতি একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানেই অংশ নেন, এমপি ডিম্পল যাদবের মসজিদ পরিদর্শন নিয়ে কিছু আপত্তিজনক মন্তব্য করেছিলেন। তার এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বুধবার সন্ধ্যায় নোয়িদার সংবাদ চ্যানেলটির স্টুডিওতে ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাকে চড় মারা হয়। একাধিক যুবক এই আক্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়।
অভিযুক্ত যুবকরা, যাদের মধ্যে শ্যাম সিং, মোহিত এবং কুলদীপ ভাটি নামে তিনজন সমাজবাদী পার্টির কর্মী রয়েছেন, ভিডিওতে তাদের দায়িত্ব স্বীকার করে এবং নিজেদের কাজের সপক্ষে দাবি করে বলেন যে, মৌলানা রশিদি এমপি ডিম্পল যাদবকে নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন। কুলদীপ ভাটি, যিনি সমাজবাদী পার্টির যুবজন সভার রাজ্য সচিব হিসেবে পরিচিত, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেন, “যেকোনো ব্যক্তি যে ভারতের মহিলাদের বিরুদ্ধে এমন আপত্তিজনক মন্তব্য করবে, তাকে এইভাবে সম্বোধন করা হবে।”
রশিদি অভিযোগ করেছেন যে তার মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এই মন্তব্যের পরই তার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক নাটক তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি কারো অপমান করতে চাইনি, আমি ইসলামী বিশ্বাসের ভিত্তিতে মন্তব্য করেছিলাম। যদি আমি কোনো ভুল করে থাকি, তা মানে এই নয় যে আমাকে এভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত।”
মৌলানা আরও বলেন, “এটি কেবল একটি রাজনৈতিক প্রচার, যা তার পক্ষে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করব এবং যেখানে প্রয়োজন, সেখানে পদক্ষেপ নেব।”
নোয়িদা সেক্টর ১২৬ থানার পুলিশ জানান, সংবাদ চ্যানেলের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শান্তির অবজ্ঞা, শারীরিক আক্রমণ এবং অশোভন আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশেষত, ১১৫, ৩৫১, এবং ৩৫২ ধারায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের ইনচার্জ ভূপেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, “মৌলানা রশিদি এবং সমাজবাদী পার্টির কর্মীরা, যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঘটনার পর মৌলানা সাজিদ রশিদি সামাজিক মাধ্যমে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “ঘটনার পর থেকে আমি হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে হুমকি পাচ্ছি। আমি দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশকে আমার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি। আমি সেক্টর ১২৬ থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছি।”
এদিকে, শ্যাম সিং, যে ব্যক্তি মৌলানাকে চড় মেরেছে, তার দাবি, মৌলানা রশিদি এমপি ডিম্পল যাদবকে অপমান করেছেন এবং তার মন্তব্যের জন্য তিনি উপযুক্ত শাস্তি প্রাপ্ত। তিনি আরও বলেন, “এটি রাজনৈতিক নাটক নয়, এটি শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
এখন, নোয়িদা পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে সকল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং বিষয়টি আদালতের সামনে নিয়ে যাবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সকল ব্যক্তি শান্তির শর্ত ভঙ্গ করবে এবং জনসাধারণের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, এই ধরনের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে। বিশেষত, যখন বিষয়টি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়।
এটি একটি অত্যন্ত সঙ্ঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি, যা শীঘ্রই সমাজে বড় ধরনের আলোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। তবে, পুলিশ ও প্রশাসন এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে।
এখন দেখার বিষয় হলো, এই ঘটনার পরবর্তী আইনি এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ কি হয় এবং এর ফলে কোথায় দাঁড়াবে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

