গুয়াহাটি, ৩০ জুলাই : অসমের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নন্দিনী কাশ্যপকে বুধবার ভোররাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর গাড়ির ধাক্কায় ২১ বছর বয়সী নলবাড়ি পলিটেকনিকের ছাত্র সামিউল হকের মৃত্যু হয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ২৫ জুলাই রাতে গুয়াহাটির উদালবক্ৰা এলাকায় ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নন্দিনী কাশ্যপকে বুধবার রাত ১:৩০ টার সময় উত্তর গুয়াহাটির রাজধানী থিয়েটারের মহড়াস্থল থেকে গ্রেফতার করে ডিসপুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে পেশ করা হবে।
গুয়াহাটি মহানগর ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) জয়ন্ত শারথি বোরার মতে, এই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা(বিএনএস) এবং ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার(বিএনএসএস) অধীনে মামলা রুজু করা হয়েছে। ধারাসমূহের মধ্যে রয়েছে বিএনএস ১০৫ (অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড, যা খুন নয়) এবং বিএনএসএস ১২৪বি (হিট-অ্যান্ড-রান, যার ফলে মৃত্যু ঘটেছে)। এই অপরাধগুলি জামিন অযোগ্য।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত কাশ্যপ একটি দ্রুতগামী বোলেরো এসইউভি চালাচ্ছিলেন। ওই গাড়ি সামিউল হককে ধাক্কা দিয়েছে। দুর্ঘটনার সময় সামিউল গুয়াহাটি পৌর নিগমের (জিএমসি) স্ট্রিটলাইট মেরামতের দলে কাজ করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ধাক্কা মারার পর গাড়িটি না থেমেই চলে যায়।
পুলিশের এক তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২৫ জুলাই রাতে। কিন্তু আমরা সে দিন কোনো তথ্য পাইনি। ২৬ জুলাই ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগের পর ঘটনাটি আমাদের নজরে আসে। তিনি আরও জানান, অভিযোগ উঠেছে যে নন্দিনী মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন, কিন্তু পরের দিন খবর পাওয়ায় তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
সামিউলকে প্রথমে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর ২৯ জুলাই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মাথায় গুরুতর আঘাত এবং একাধিক হাড় ভাঙার চিহ্ন ছিল।
জিএমসি-র সহকর্মীরা জানান, তারা গাড়িটিকে ধাওয়া করে কাহিলিপাড়া এলাকার এক অ্যাপার্টমেন্টে খুঁজে পান। অভিযোগ, সেখানে কাশ্যপ গাড়িটি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন এবং এক পথচারীকে মারধর করেন। কারণ, ওই পথচারী মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেছিলেন।
পুলিশ ইতিমধ্যে কাশ্যপের দুটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গোটা রাজ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অল অসম পলিটেকনিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আপসু) ডিসপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছে এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে।
সামিউলের মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা আমাদের ছেলের মৃত্যুর ন্যায়বিচার চাই। সে (নন্দিনী) একবারও এসে দেখেনি। চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে বলেছিল, কিন্তু বিপদের সময় ছেড়ে পালিয়েছে। সমাজমাধ্যমে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা চলছে। নেটিজেনরা অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ডিসিপি বোরার বক্তব্য, অভিনেত্রী তদন্তে সহযোগিতা করছেন এবং ২৬ জুলাই থানায় এসেছিলেন।
এদিকে, ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘রাজধানী থিয়েটার’ সংস্থা নন্দিনী কাশ্যপের সঙ্গে সমস্ত পেশাগত সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জানিয়েছে, তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না।

