নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ জুলাই: বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আজ বিজেপি প্রদেশ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এমনটাই অভিযোগ করলেন প্রদেশ বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য। এছাড়াও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। তাঁর শাসনকালে রাজ্যে সন্ত্রাসের রিপোর্ট কার্ডও তুলে ধরেছেন রাজিব ভট্টাচার্য।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ বিজেপির সভাপতি রাজিব ভট্টাচার্য বলেন, বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্মার্ট মিটার সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্মার্ট মিটারের ফলে সাধারণ জনগণের উন্নয়ন সাধিত হবে। বর্তমানে বিজেপি সরকার গোটা দেশে স্বচ্ছতা আনার জন্য নিয়োগ নীতি থেকে শুরু করে বিধানসভা, বিভিন্ন পরিষেবা সর্বক্ষেত্রে ই-পরিষেবা চালু করছে। ই-পরিষেবা চালুর ফলে সর্বক্ষেত্রে জনসাধারণকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় থাকছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ই-রেশন পরিষেবা চালুর ফলে সারাদেশে যে কোন জায়গা থেকে সাধারণ নাগরিক তার প্রাপ্য রেশন সামগ্রী তুলতে পারছেন। সেক্ষেত্রে কোন ধরনের কারচুপি করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, রাইটস অফ কনজিউমার রুলস ২০২০ অনুসারে প্রতিটি বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগাতে বিদ্যুৎ দপ্তর বদ্ধপরিকর। যদি কোন ক্ষেত্রে স্মার্ট মিটার লাগানো না হয় তাহলে সেই বিষয়েও বিদ্যুৎ দপ্তরকে কারণদর্শাতে হবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৯৫ হাজার ৯৮৭ জন গ্রাহক স্মার্ট মিটার লাগিয়েছেন। সেক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের প্রতিদিনের বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্পর্কে অবগত হতে পারছেন এবং প্রতিদিন কতটুকু বিদ্যুৎ তারা ব্যবহার করছেন সেই বিষয়টির উপরও নজরদারি রাখতে পারছেন। যার ফলে গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের মধ্যে একটি স্বচ্ছ পরিষেবা বজায় থাকছে। শুধু ত্রিপুরায়ই নয়, গোটা ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে এই স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। এছাড়াও স্মার্ট মিটার লাগিয়ে যদি কোন গ্রাহক অসুবিধার সম্মুখীন হন সে ক্ষেত্রেও হেল্পলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে সরকার। যার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গ্রাহকদের সাহায্য করবেন। স্মার্ট মিটার সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন কারণ নেই। রাজ্যসহ দেশের উন্নয়নে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিজেপি সরকার।
এছাড়াও এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্যকে ঘিরে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন সম্প্রতি দক্ষিণ জেলার একটি সভায় মানিক সরকার বলেন বিজেপি সরকার সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ। এই কথার কোন ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সময়কালের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরেন তিনি।
সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য তথ্য দিয়ে বলেন, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সময়ে মাত্র ১১২ দিনে ১১৮ জন নিহত হয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন ৮৭ জন, ধর্ষিতা হয়েছেন ২৯জন, নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৬ জন। তার আগে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেবের সময়ে তিন বছরে ৮২ জন নিহত হয়েছেন, ধর্ষিতা হয়েছেন ১৯ জন, ১২০০ জন উধাও হয়ে গেছেন তাদের কোন খোঁজখবর মিলেনি। কিন্তু বর্তমান বিজেপি সরকার এই সাত বছরে গোটা রাজ্যের সন্ত্রাস দমনে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন সন্ত্রাস এবং নেশা সামগ্রী সংক্রান্ত বিষয়ে। এই সকল বিষয়ে কোন ধরনের আপোষ করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২৩-২৪: অর্থবছরে ২৭ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাজ, খাদ্য সহ যাবতীয় উন্নয়নে এই বাজেট সকল স্তরের জনগণের কথা চিন্তা করে গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের ভিশন ডকুমেন্টের প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি সফল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে সব ক্ষেত্রেই রাজ্য এগিয়ে আসছে। তাই বিরোধীরা বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ চলছে তার কোন ভিত্তি নেই বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন সাংসদ রাজিব ভট্টাচার্য।

