ওড়িশা উত্তাল : সৌম্যশ্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিজেডি কর্মীদের লোক সেবা ভবন ঘেরাওয়ের চেষ্টা, কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ল পুলিশ, আটক ১০০-র বেশি, মৃতার পরিবারের সাথে কথা বললেন রাহুল, সহায়তার আশ্বাস, ১৭ জুলাই ওড়িশা বনধের ডাক কংগ্রেসের

ভুবনেশ্বর, ১৬ জুলাই : ফকির মোহন কলেজের ২০ বছর বয়সী ছাত্রী সৌম্যশ্রী বিসির মৃত্যুকে ঘিরে ওড়িশায় রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। আজ বিজেডি(বিজু জনতা দল) কর্মীরা ওই ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে লোক সেবা ভবন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হয় এবং ১০০-রও বেশি বিজেডি কর্মী, যাঁদের মধ্যে বহু মহিলা কর্মীও রয়েছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে, বালেশ্বরের ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজের ছাত্রী সৌম্যশ্রী বিসির মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ সৌম্যশ্রীর পিতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। কংগ্রেস আগামীকাল ১৭ জুলাই রাজ্যজুড়ে বনধের ডাক দিয়েছে।

সৌম্যশ্রী বিসি গত ১২ জুলাই নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন ও মানসিক হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করার পরেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই, ওই কঠিন পদক্ষেপ নেন তিনি। গত ১৪ জুলাই এআইআইএমএস ভুবনেশ্বরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিজেডি কর্মী ও সমর্থকরা রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে লোক সেবা ভবন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন। আজ প্রতিবাদীরা ব্যারিকেড ভেঙে ভবনের দিকে এগোলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে এবং লাঠিচার্জও করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেডি নেত্রী প্রতীতি রঞ্জন ঘড়েই ও ববি দাস গুরুতর জখম হন।

ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেডি। হাই কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত চাইছে ওড়িশার প্রধান বিরোধী দল। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মজিহি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজের পদত্যাগও দাবি করেছেন দলের নেতারা। কংগ্রেস, বামদল-সহ একাধিক বিরোধী দল সৌম্যশ্রীর মৃত্যুতেও দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচারের দাবিতে পৃথক কর্মসূচির ঘোষণা করেছে।

এদিন রাহুল গান্ধী শোকবার্তায় বলেন, ওড়িশার বালেশ্বরে যে সাহসী কন্যা ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারাল, তাঁর পিতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর কণ্ঠে অনুভব করেছি মেয়ের যন্ত্রণা, স্বপ্ন আর সংগ্রাম। তাঁকে আশ্বস্ত করেছি, কংগ্রেস দল ও আমি তাঁদের পাশে আছি। এই ঘটনা শুধু অমানবিক ও লজ্জাজনক নয়, সমাজের জন্য এক গভীর আঘাত। আমরা সর্বতোভাবে নিশ্চিত করব, ভুক্তভোগীর পরিবার সম্পূর্ণ ন্যায় পায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাহুল গান্ধী এক্স-এ লেখেন, এটি এক নিষ্ঠুর ও কলঙ্কজনক ঘটনা, যা গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে, কংগ্রেস সৌম্যশ্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ও তার পরিবারের ন্যায়বিচারের দাবিতে আগামী ১৭ জুলাই ওড়িশা জুড়ে ২৪ ঘণ্টার বন্‌ধ ঘোষণা করেছে। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে জনমত উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং বিরোধী দলগুলির ক্রমাগত চাপের মুখে রাজ্য সরকারের অবস্থান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।