ওয়াশিংটন, ১৬ জুলাই : নেটো মহাসচিব মার্ক রুটে বুধবার ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন সিনেটরের সঙ্গে বৈঠকের পর এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন ভারত, চীন ও ব্রাজিলের প্রতি। তিনি বলেন, এই তিন দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে গেলে তাদের “মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত” হতে হতে পারে এবং পশ্চিমা জোটের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। রুটে সরাসরি বলেন, “আপনারা যদি এখন বেইজিং, দিল্লি বা ব্রাসিলিয়ায় থাকেন, তাহলে দয়া করে একবার ভেবে দেখুন — কারণ এটি আপনাদের ওপর ভীষণভাবে আঘাত হানতে পারে।” তিনি তিন দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে শান্তি আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
এই হুঁশিয়ারির একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইউক্রেনকে “ম্যাসিভ” বা ব্যাপক পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ করা হবে — যার মধ্যে রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবারুদ। ট্রাম্প জানান, এই অস্ত্র ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর অর্থায়নে সরবরাহ করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। একই সঙ্গে ট্রাম্প একটি সময়সীমা বেঁধে দেন — আগামী ৫০ দিনের মধ্যে যদি রাশিয়া শান্তিচুক্তিতে সম্মত না হয়, তবে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আমদানিকারী দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মাধ্যমিক শুল্ক (secondary tariffs) আরোপ করা হবে।
রুটে জানান, ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা শুধু প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং আক্রমণাত্মক সামর্থ্যও এতে থাকবে। যদিও কোন কোন অস্ত্র সরবরাহ করা হবে তা নিয়ে এখনো বিস্তারিত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে বিষয়টি পেন্টাগন, ইউরোপের সুপ্রিম কমান্ডার এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। রুটে বলেন, “এটা শুধুই প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র নয়, আক্রমণাত্মক ব্যবস্থাও রয়েছে, তবে বিস্তারিত নির্ধারণ এখনো চলছে।”
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আলোচনায় আগ্রহী থাকলেও কোনো আল্টিমেটাম মেনে নেওয়া হবে না। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এই হুঁশিয়ারিকে “থিয়েট্রিকাল” বা নাটকীয় আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেন, “এই চাপ প্রয়োগ কৌশল রাশিয়ার ওপর কোনো কাজ করবে না।”
বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও শান্তি আলোচনার সম্ভাব্যতা এক নতুন মোড় নিচ্ছে, যেখানে কেবল ইউক্রেন বা রাশিয়া নয়, বরং রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদাররাও পশ্চিমা চাপের মুখে পড়ছে। এখন আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো — ভারত, চীন ও ব্রাজিল কীভাবে এই চাপে সাড়া দেবে এবং তারা পুতিনের সঙ্গে শান্তির জন্য সরাসরি যোগাযোগে আগ্রহী হবে কিনা।

