মুম্বই, ১৬ জুলাই: শিবসেনা বিধায়ক সঞ্জয় গাইকের এক ক্যান্টিন কর্মীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার মহারাষ্ট্র বিধানসভা চত্বর চাক্ষুষ করল বিরোধী জোট মহা বিকাশ আঘাড়ী (এমভিএ)-র অভিনব প্রতিবাদ—তাঁরা গায়ে সাদা ‘বানিয়ান’ ও কোমরে ‘তোয়ালে’ জড়িয়ে শাসক শিবসেনা ও বিধায়ক গাইকের বিরুদ্ধে সরব হলেন।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে, যখন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, শিবসেনা বিধায়ক সঞ্জয় গাইক বিধায়ক হোস্টেলের ক্যান্টিনে এক কর্মীকে চড়-ঘুষি মারছেন। অভিযোগ, কর্মীটি তাঁকে ‘বাসি’ খাবার পরিবেশন করেছিলেন। গাইক নিজে সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি ও তোয়ালে পরে কর্মীকে ডালের প্যাকেট শুঁকতে বাধ্য করেন এবং পরে তাঁর ওপর শারীরিক নিগ্রহ চালান। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরই শাসকদলের অন্দরেও নিন্দার সুর শোনা যায়, তবে বিরোধীরা এই ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ শুরু করে।
বুধবার এমভিএ-র অন্তর্গত কংগ্রেস, এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী) ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা শাখার বিধায়কেরা ‘বানিয়ান ও তোয়ালে’ পরে বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা শ্লোগান তোলেন, “গুন্ডা রাজ বন্ধ করো”, “গাইকেকে বরখাস্ত করো”।
বিধান পরিষদের বিরোধী দলনেতা অম্বাদাস দানভে বলেন, “গাইকের এই কাণ্ড শুধু একজন কর্মীর উপর হিংসা নয়, এটা রাজ্যের আইনের শাসনের উপর আঘাত। সরকার যদি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরিষ্কার হবে যে তারা গুন্ডাদের আশ্রয় দিচ্ছে।”
এমভিএ-র অন্য এক নেতা ও কংগ্রেসের বিধায়ক বিজয় ওয়াডেট্টিওয়ার কড়া ভাষায় বলেন, “এই ঘটনার পর গাইকের কোনও অধিকার নেই বিধানসভায় বসার। তিনি একজন সাধারণ কর্মীর সঙ্গে যা করেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা চাই, তাঁকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করা হোক এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এনসিপি (এসপি) বিধায়ক জিতেন্দ্র আওয়াধ বলেন, “গাইক ঘটনার সময় যেভাবে পোশাক পরে ছিলেন—সাদা গেঞ্জি ও তোয়ালে, আমরা আজ তেমনই সেজে জানাতে এসেছি যে ক্ষমতার আসনে বসে অনেকে কতটা নিচু মানসিকতার হয়ে উঠেছেন। মানুষকে দেখাতে হবে এটাই আসল চেহারা।”
বিরোধীদের জোরালো দাবি—শিবসেনা বিধায়ক সঞ্জয় গাইককে অবিলম্বে বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে। তাঁরা বলছেন, যদি শাসকদল এমন ঘটনা বরদাস্ত করে, তাহলে তা গোটা প্রশাসনের প্রতি অবমাননা।
বিক্ষোভের মাধ্যমে বিরোধীরা শাসক জোট মহায়ুতির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এখনো সরকারিভাবে বিধায়ক গাইকের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।
এই প্রতিবাদ ভবিষ্যতে মহারাষ্ট্র রাজনীতির গতিপথে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলবে। তবে এই ধরনের অনন্য প্রতিবাদ নিঃসন্দেহে নজর কেড়েছে জনতার।

