শ্রীনগর, ১৫ জুলাই : চলতি বছরের অমরনাথ যাত্রায় এখনো পর্যন্ত মোট ২.২০ লক্ষেরও বেশি তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন। মঙ্গলবার জম্মু থেকে আরও একটি দল ৬,৩৮৮ যাত্রী দু’টি নিরাপত্তা ঘেরা কনভয়ে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা দেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, আজ ভোর ৩.২৬ মিনিটে ১০৩টি গাড়ি নিয়ে প্রথম কনভয় বালটাল বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে ২,৫০১ জন তীর্থযাত্রীকে নিয়ে রওনা দিয়েছে। অপরদিকে, সকাল ৪.১৫ মিনিটে ১৪৫টি গাড়ি নিয়ে দ্বিতীয় কনভয় ৩,৮৮৭ জন তীর্থযাত্রীকে নিয়ে নুনওয়ান (পাহালগাম) বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। এবারের অমরনাথ যাত্রা ৩ জুলাই শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে ৯ আগস্ট শ্রাবণ পূর্ণিমা ও রক্ষাবন্ধনের দিনে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় জম্মু-কাশ্মীরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে, বালটাল ও নুনওয়ান বেস ক্যাম্প থেকে পবিত্র গুহার উদ্দেশে যাত্রীদের যাত্রার সিদ্ধান্ত আবহাওয়া বিবেচনা করে নেওয়া হবে।
গত ১০ জুলাই, ‘ছাড়ি মুবারক’ (ভগবান শিবের পবিত্র গদা) -এর ভূমি পূজন অনুষ্ঠান পালিত হয় পাহালগামে। মহন্ত স্বামী দীপেন্দ্র গিরির নেতৃত্বে ঋষিদের একটি দল ছাড়ি মুবারককে শ্রীনগরের দশনামি আখড়া থেকে পাহালগামে নিয়ে যান। সেখান থেকে গৌরী শঙ্কর মন্দিরে গিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়। এই ছাড়ি মুবারক আগামী ৯ আগস্ট গুহা মন্দিরে পৌঁছাবে এবং অমরনাথ যাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি করবে।
এবারের যাত্রাকে ঘিরে তিনস্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল পাহালগামের বৈসরান উপত্যকায় পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দ্বারা ২৬ জন নিরীহ মানুষকে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে এবারের যাত্রা নিরাপত্তার দিক থেকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সেনা, বিএসএফ, সিআরপিএফ, এসএসবি এবং রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য অতিরিক্ত ১৮০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ‘অপারেশন শিবা ২০২৫’-এর আওতায় ৮,৫০০-এরও বেশি জওয়ান মোতায়েন করেছে, ব্যবহার করছে উন্নত নজরদারি ও যুদ্ধ প্রযুক্তি।
জম্মুর ভাগবতী নগর যাত্রী নিবাস থেকে গুহা মন্দির পর্যন্ত সমস্ত ট্রানজিট ক্যাম্প এবং পথরেখা নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।
তীর্থযাত্রীরা ৩,৮৮৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পবিত্র গুহা মন্দিরে দুইটি পথ ধরে পৌঁছাতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী পাহালগাম রুট অথবা ছোট বালটাল রুট। পাহালগাম রুটে চন্দনওয়ারি, শেশনাগ ও পঞ্চতার্নি অতিক্রম করে মোট ৪৬ কিমি হাঁটতে লাগে, যা সাধারণত ৪ দিন সময় নেয়। অন্যদিকে বালটাল রুটে মাত্র ১৪ কিমি হেঁটে যাত্রী একদিনেই গুহা মন্দিরে পৌঁছে ফিরে আসতে পারেন।
এবছর নিরাপত্তার কারণে কোনও হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা হয়নি। এই গুহা মন্দিরে একটি প্রাকৃতিক বরফ-শিবলিঙ্গ গঠিত হয়, যা চন্দ্রের কলার সঙ্গে সঙ্গে বড় ও ছোট হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই বরফ-শিবলিঙ্গ ভগবান শিবের অলৌকিক শক্তির প্রতীক।

