নয়াদিল্লি, ১৩ জুলাই : শ্রাবণ মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া হিন্দু ধর্মের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কানওয়াড় যাত্রা’ এবার কেবল ভক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, প্রশাসনিক ও আইনি দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সময় হাজার হাজার ভক্ত বিভিন্ন স্থান থেকে গঙ্গাজল সংগ্রহ করে ‘কানওয়াড়’ বহন করে শিব মন্দিরে ‘জলাভিষেক’ করতে যান। ভক্তরা মাংস, পেঁয়াজ, রসুন বর্জন করে নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন। কিন্তু এ বছরের যাত্রা একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছেছে, কারণ উত্তরপ্রদেশ সরকার এক নির্দেশিকায় যাত্রাপথে অবস্থিত দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোকে মালিকের নাম ও পরিচয় প্রকাশকারী QR কোড প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে।
এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অপূর্বানন্দ ঝা ও অন্যান্যরা সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন, যার শুনানি ১৫ জুলাই হবে বিচারপতি এম এম সুন্দ্রেশ এবং এন কোটিস্বর সিং-এর বেঞ্চে। পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, এই ব্যবস্থা পূর্ববর্তী স্থগিত আদেশের বিরোধিতা করে এবং এটি ধর্ম ও জাতি ভিত্তিক বৈষম্যমূলক প্রোফাইলিংয়ের শামিল। দোকানদারদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবি।
অন্যদিকে, যাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পুলিশ কমিশনার সত্যেন্দ্র গুপ্তা একটি পর্যালোচনা বৈঠকে নির্দেশ দেন যে রুটে মোট ১৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। মূলত তিনটি যাত্রাপথ নির্ধারিত হয়েছে—কালিন্দি কুঞ্জ থেকে আগ্রা ক্যানাল পর্যন্ত, বদরপুর বর্ডার থেকে আউটার বাইপাস হয়ে, এবং বদরপুর বর্ডার থেকে জাতীয় সড়ক ধরে। এই রুটগুলিতে নিয়মিত টহল চলবে, পাশাপাশি কুন্ডলি-গাজিয়াবাদ-পলওয়াল রোডে বিশেষ মোবাইল টিম কাজ করবে।
শহরের বিভিন্ন অংশে ২৫টি চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে, যেগুলির মধ্যে রয়েছে সেক্টর-১৪, তিগাঁও, শাহপুরা, মলেরনা চৌক ইত্যাদি। যাত্রাপথে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স, ৮টি ফায়ার ব্রিগেড ও ৮টি ক্রেন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিসিটিভি ও ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো যাত্রাপথ নজরদারিতে রাখা হবে। সাদা পোশাকে পুলিশের টিম, কাওয়াড়িয়ার ছদ্মবেশে নিয়োজিত পুলিশ ও মহিলা নিরাপত্তার জন্য বিশেষ টিমও মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, দিল্লি, গুরগাঁও, পলওয়াল ও উত্তরপ্রদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে এবং কেউ গুজব বা উসকানিমূলক বার্তা ছড়ালে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সার্বিকভাবে, কানওয়াড় যাত্রা এ বছর একাধারে আধ্যাত্মিক সাধনার পথে যেমন বহমান, তেমনই তা রাষ্ট্র, সমাজ ও বিচারব্যবস্থার একটি সংবেদনশীল সহাবস্থানের চিত্রও হয়ে উঠেছে। যাত্রাটি কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষতা, আইনি অধিকার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বাস্তব পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

