পাটনা, ৯ জুলাই : বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে আজ মহাগঠবন্ধনের ডাকে রাজ্যজুড়ে ‘বিহার বন্ধ’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা এবং সাংসদ রাহুল গান্ধী ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এক বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দেন, যা পাটনার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে প্রশাসনিক নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাঁদের মিছিল মাঝপথেই আটকে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরেই রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলেন এবং বিজেপি ও আরএসএসের সঙ্গে কমিশনের ‘সাংগঠনিক সাযুজ্য’-র অভিযোগ করেন।
রাহুল গান্ধী এই অবস্থান থেকে বলেন, “মহারাষ্ট্রে নির্বাচন চুরি হয়েছে। বিহারেও সেই একই কাজ চলছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। ভোটার লিস্ট সংশোধনের নামে সাধারণ মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”
মহাগঠবন্ধনের দাবি, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে লক্ষ লক্ষ গরিব, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ বিহারজুড়ে এক বিরাট আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, যাতে কংগ্রেস, আরজেডি, বামপন্থী দলসহ একাধিক বিরোধী শক্তি অংশ নেয়।
এই প্রেক্ষাপটেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে একটি মিছিল আয়োজিত হয়, যেখানে তিনি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা শুধু ভোট চুরি করছেন না, দেশের ভবিষ্যৎ, যুবকদের অধিকার, কর্মসংস্থান, সব কিছু চুরি করছেন। এই চুরি বিহার মেনে নেবে না।”
রাহুল গান্ধী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের পরই মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানাতে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। লোকসভায় ইন্ডিয়া জোট মহারাষ্ট্রে জয়লাভ করে, কিন্তু বিধানসভায় হঠাৎ বিপরীত ফল হয়। তখন আমরা বেশি কিছু বলিনি, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা ডেটা বিশ্লেষণ শুরু করি। দেখা যায়, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকায় প্রায় এক কোটি নতুন নাম যোগ হয়েছে এবং ১০ শতাংশ বেশি ভোট পড়েছে। এই নতুন ভোটারদের অধিকাংশই সেইসব এলাকায় যোগ হয়েছে, যেখানে বিজেপি জিতেছে। এটা কি স্বাভাবিক? না, এটা একটা সংগঠিত চুরি।”
তিনি জানান, “আমরা একাধিকবার মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকা চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের সেই তালিকা দেওয়া হয়নি। কমিশন কী লুকাতে চাইছে?”
রাহুল গান্ধী আরও বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেন। আমি ছিলাম না, কিন্তু যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা বললেন কমিশনের আচরণ ছিল ঠিক বিজেপি ও আরএসএসের মতো। এক সময় ছিল, যখন সমস্ত দলের সহমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হতো। আজ বিজেপি একতরফাভাবে কমিশনার বেছে নিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে যদি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়, তবে নির্বাচন আর স্বাধীন থাকবে না। ভোট আর জনগণের হাতে থাকবে না।”
বিহারবাসীর উদ্দেশে রাহুল গান্ধীর বার্তা ছিল স্পষ্ট ও সরাসরি। তিনি বলেন, “যেভাবে মহারাষ্ট্রে ভোট চুরি হয়েছে, বিহারে আমরা তা হতে দেব না। এটা গরিবদের ভোট ছিনিয়ে নেওয়ার একটি পদ্ধতি। কিন্তু বিহারের জনগণ সচেতন, সাহসী এবং গণতন্ত্রপ্রেমী। তারা এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।”
তিনি আরও বলেন, “এটা শুধুমাত্র নির্বাচনের লড়াই নয়, এটা অধিকার ও ন্যায়বিচারের লড়াই। বিহারের যুবসমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আমরা সবাই মিলে এই চুরি রুখব।”
এই বক্তব্যে রাহুল গান্ধী শুধুমাত্র এক দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি বড় পরিসরে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এটা গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। শুধু বিহার নয়, সারা দেশ আজ এই লড়াইয়ে সামিল হবে।”

