আগরতলা, ২ জুলাই: ত্রিপুরায় একের পর এক রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনা রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী দল সিপিআই(এম), কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে শাসকদলের দুষ্কৃতকারীরা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, অধিকাংশ ঘটনাতেই পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকেছে বলে অভিযোগ। তাই রাজ্যের আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী।
এদিনের চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি লেখেন, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ‘পুলিশকে ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক হামলা, দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, মোটরবাইক ধ্বংস, সভা ভণ্ডুল ইত্যাদি ঘটনা প্রায় দৈনন্দিন চিত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি এসব হামলা দিবালোকে পুলিশেী সামনেই ঘটছে। অথচ পুলিশ কোনওরকম হস্তক্ষেপ করছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিয়ে মৌন দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে, দুষ্কৃতীদের সাহস আরও বেড়ে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বারবার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, বলে অভিযোগ তুলেন তিনি।
এদিন তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে।সাম্প্রতিক ১৭ জুন বিশালগড়ে পূর্ব নিধারিত সিপিআইএমের একটি কর্মসূচি ছিল। প্রায় একশো জনের উপস্থিতিতে সভা চলাকালীন হঠাৎ করে ৫০-৬০ জনের একদল বিজেপি যুব মোর্চার সমর্থক হাতে দেশি অস্ত্র নিয়ে সেখানে হামলা চালায়। ইট, পাথর ছুড়ে মারার পাশাপাশি প্রায় ২০টি মোটরবাইক গুঁড়িয়ে দেয় এবং পার্টি অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এসডিপিও, বিশালগড় এবং ওসি, বিশালগড় থানার নেতৃত্বে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী। তবুও হামলাকারীদের থামার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, পুলিশের যে স্বাধীন ক্ষমতা আইনত নির্ধারিত, তা পুনরায় ঘোষণা করার প্রয়োজন কী রয়েছে। এই সমস্ত ঘটনায় শুধু বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকারই ক্ষুণ্ন হচ্ছে না, রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে।
তেমনি, ২১ জুন উদয়পুর বাজারে কংগ্রেসের সভা চলাকালীন হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। ওই সভায় বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ-সহ উপস্থিত কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়। যদিও নিরাপত্তাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, তারা কোনো ধরনের প্রতিরোধ করেননি। তাছাড়া, ২২ জুন জিরানিয়ায় সিপিআইএমের কর্মসূচিতে যোগদান করার অপরাধে রাতের বেলায় একাধিক পরিবারতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। কিন্তু পুলিশ এই ঘটনায় কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকে যায়। তেমনি, ২৪ জুন টাকারজলা কমিউনিটি হলে সিপিআই(এম)-এর একটি দলীয় সভায় মুখোশ পরা প্রায় ১৫-২০ জন তিপরা মথার সমর্থক চড়াও হয়। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের পর শুরু হয় ইট ছোঁড়া। সভা অকাল সমাপ্ত করতে বাধ্য হন আয়োজকরা। তাতে সাতজন, যার মধ্যে একজন মহিলা, গুরুতরভাবে আহত হন। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
তাঁর কঘায়, মুখ্যমন্ত্রীর “পুলিশকে ফ্রি হ্যান্ড” দেওয়ার ঘোষণার পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে হামলা বেড়ে চলেছে, তাতে বিরোধীদের অভিযোগ—এটি একপ্রকার মৌন সম্মতি ছাড়া আর কিছু নয়। তাই রাজ্যে আইনপর শাসন ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

