চেন্নাই, ২ জুলাই : তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলায় পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর শিকার ২৮ বছর বয়সি অজিত কুমারের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। মৃতের ছোট ভাই নবীন কুমারকে এএভিন-এর কারখানায় টেকনিশিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারটিকে একটি আবাসন জমিও বরাদ্দ করা হয়েছে।
ওই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘিরে রাজ্যজুড়ে প্রবল রাজনৈতিক উত্তেজনা ও জনরোষ তৈরি হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শাসক দল ডিএমকে মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্টালিন সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার একদিন পরেই এইসব ঘোষণা হয়েছে। মাদুরাই বেঞ্চ অব মাদ্রাজ হাইকোর্টের কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের চাপের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্টালিন এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানান, মাদ্রাজ হাইকোর্ট জানিয়েছে সিবি-সিআইডি তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু আমি চাই না এই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক। তাই আমি এটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিচ্ছি। তামিলনাড়ু সরকার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
তিনি দোষী পুলিশদের আচরণকে “অমার্জনীয় ও অন্যায়” বলে নিন্দা করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে অজিত কুমারের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। মৃতের মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দেন।
অজিত কুমার মাদাপুরম ভদ্রকালি অম্মান মন্দিরে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। ২৭ জুন ৯.৫ সোভেরেইন সোনার চুরির অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে। অভিযোগ, একটি ছয় সদস্যের স্পেশাল টিম তাকে হেফাজতে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে থিরুপ্পুভানম থানার পাঁচ পুলিশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং শিবগঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আশীষ রাওয়াতকে বাধ্যতামূলক অপেক্ষার তালিকায় রাখা হয়েছে। ডিএসপি-কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার মাদুরাই বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, রাষ্ট্র নিজেই তার এক নাগরিককে হত্যা করেছে। প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে, অজিতের দেহে অন্তত ৪৪টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। এমনকি তার যৌনাঙ্গ, মুখ ও কানে লঙ্কার গুঁড়ো পাওয়া গেছে, যা চরম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ইঙ্গিত দেয়।
আদালত আরও জানায়, রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া অপর্যাপ্ত এবং সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমনকি উচ্চপদস্থদেরও বাদ না দিয়ে জবাবদিহি দাবি করে। বিচারপতির নির্দেশে মাদুরাই জেলা আদালতের একজন বিচারক ৮ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
সিবিআই-এর তদন্ত হাতে নেয়ার সিদ্ধান্তে এখন সকলের নজর রয়েছে এই সংবেদনশীল মামলার পরবর্তী গতিপথের দিকে। এই ঘটনায় তামিলনাড়ুতে হেফাজতে মৃত্যুর সমস্যা ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
—

