নয়াদিল্লি, ১ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক আটদিনব্যাপী পাঁচ দেশ সফরে যাচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছে ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও নামিবিয়া। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণ ছাড়াও এই সফরের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলির সঙ্গে ভারতের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্য রয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী এই সফরে রওনা হওয়ার প্রাক্কালে বিরোধী দল কংগ্রেস তীব্র কটাক্ষ করেছে। কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি (কমিউনিকেশনস) জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রীর এই বিদেশ সফরকে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, “যখন দেশের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে, তখন আমাদের ‘স্বঘোষিত শক্তিশালী নেতা’ দেশ ছেড়ে বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন।”
কংগ্রেসের মতে, প্রধানমন্ত্রী এই সফরের মাধ্যমে দেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটজনক ইস্যু থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমত, মণিপুরে চলমান সহিংসতা ও অশান্তি প্রসঙ্গে কংগ্রেসের অভিযোগ, গত এক বছর ধরে মণিপুর উত্তাল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেখানে একবারের জন্যও যাননি। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, এবং জনগণের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বিকার।
দ্বিতীয়ত, অপারেশন সিন্দুরের প্রথম দুই দিনের ব্যর্থতা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের কিছু মন্তব্য সামনে এসেছে, যেখানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর কৌশলগত সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও ইন্দোনেশিয়ার ভারতীয় দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা আধিকারিকের বক্তব্য ‘প্রসঙ্গের বাইরে তুলে ধরা হয়েছে’ এবং মিডিয়া রিপোর্টগুলি প্রকৃত বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা, তবুও কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি।
তৃতীয়ত, কংগ্রেস বলছে, প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই দাবির ব্যাপারে মুখ খোলেননি, যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি গোপন কূটনৈতিক উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি আনতে সফল হয়েছিলেন এবং এটি নাকি একটি ট্রেড ডিলের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছিল। কংগ্রেসের দাবি, এমন একটি গুরুতর বিষয়ের ব্যাখ্যা দেশবাসীর জানা উচিত।
চতুর্থত, কংগ্রেসের অভিযোগ অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত পহেলগামে সংঘটিত জঙ্গি হামলার দোষীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তরা পূর্বে পুঞ্চ (ডিসেম্বর ২০২৩), গগনগীর এবং গুলমার্গ (অক্টোবর ২০২৪)-এর হামলার সঙ্গেও যুক্ত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না নেওয়া এবং বিচারহীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস।
জয়রাম রমেশ এক্স-এ তাঁর পোস্টে ব্যঙ্গ করে লেখেন, “সুপার প্রিমিয়াম ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার পিএম আবারও দেশ ছেড়ে পালালেন, এবার এক আটদিনের পাঁচ দেশীয় ‘জলভ্রমণে’। দেশের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকার এই কৌশল নতুন নয়।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঁচ দেশ সফরের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, তিনি প্রথমে ২ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ঘানা সফর করবেন। এরপর ৩ থেকে ৪ জুলাই ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোতে অবস্থান করবেন। সফরের তৃতীয় ধাপে, প্রধানমন্ত্রী ৪ থেকে ৫ জুলাই আর্জেন্টিনায় থাকবেন। এরপর ৫ থেকে ৮ জুলাই তিনি ব্রাজিলে ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন এবং সেখানেই রাষ্ট্রীয় সফরও করবেন। সফরের শেষ পর্যায়ে, ৮ জুলাই-এর পর তিনি নামিবিয়ায় রওনা হবেন।
বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য, কৌশলগত সহযোগিতা, উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে সচেষ্ট হবেন। বিশেষ করে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মতো অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার।
বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও সমালোচনার মুখে কংগ্রেস এই সফরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই দেখাতে চাইছে। তবে এটি কতটা কূটনৈতিক সফলতা আনবে এবং দেশীয় রাজনৈতিক সমালোচনার মোকাবিলা করতে পারবে, তা সময়ই বলবে।

