দিল্লিতে পুরনো গাড়িতে জ্বালানি নিষিদ্ধ, শুরু কার্যকর

নয়াদিল্লি, ১ জুলাই : বায়ু দূষণ মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ হিসেবে আজ মঙ্গলবার থেকে দিল্লি সরকার ‘এন্ড-অফ-লাইফ’ বা নির্ধারিত বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের উপর জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা কমিশনের নির্দেশ অনুসারে, রাজধানী অঞ্চলজুড়ে সকল পেট্রোল পাম্পে ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল ও ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোলচালিত যানবাহনগুলোতে আর জ্বালানি দেওয়া হবে না।

এই নিয়ম কার্যকর করতে পেট্রোল পাম্পগুলোতে বসানো হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ‘অটোমেটিক নাম্বার প্লেট রিকগনিশন’ ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা গাড়ির নম্বর দেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরনো গাড়ি শনাক্ত করবে এবং সেই তথ্য অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করা হবে। নিয়ম লঙ্ঘন করলে চারচাকা গাড়ির মালিকদের ১০,০০০ টাকা এবং দুইচাকা গাড়ির মালিকদের ৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে।

পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষরা বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিবেক বিহারের একটি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার সঞ্জয় দেধা বলেন, সরকার ক্যামেরা ও সিস্টেম বসিয়েছে। আজ থেকে দেখা যাবে সিস্টেমটি কতটা কার্যকর। সার্ভারে সমস্যা হলে পুরনো গাড়ি চিহ্নিত করে হাতে জ্বালানি বন্ধ করা হবে।

ভারত পেট্রোলিয়াম জনৈক পাম্প সুপারভাইজার বলেন, আজ ১ তারিখ থেকে পুরনো পেট্রোলচালিত গাড়িতে জ্বালানি দেওয়া বন্ধ হয়েছে। আমরা গাড়ির অবস্থা এবং কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হব। সরকার জানিয়েছে, এই নতুন নিয়মের আওতায় পুরনো গাড়ি যদি রাস্তার পাশে বা পেট্রোল পাম্পের আশেপাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়, তাহলে সেগুলো জব্দ করা হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, গাড়ির মালিকদের নিজ নিজ যানবাহনের নিবন্ধন স্ট্যাটাস যাচাই করে পুরনো গাড়ি রাস্তায় না বের করার আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন। অন্যথায় জরিমানা ও গাড়ি জব্দের মুখে পড়তে হবে। এই উদ্যোগ দিল্লির দূষণ কমাতে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

দূষণ রোধে দিল্লি সরকারের পুরনো গাড়িতে জ্বালানি বন্ধের সিদ্ধান্তে অনেকেই স্বাগত জানালেও, কেউ কেউ এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা ও সমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নতুন নীতিমালার অধীনে ইতিমধ্যেই দুইটি মোটরসাইকেল চিহ্নিত করে জব্দ করা হয়েছে এবং স্ক্র্যাপিং-এর জন্য পাঠানো হয়েছে। এটি নিয়ম কার্যকরের অংশ হিসেবে প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ।

এই কঠোর অভিযানের পেছনে রয়েছে ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর একটি প্রতিবেদনের উদ্বেগজনক তথ্য। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত সেই বিশ্লেষণে জানানো হয়েছিল, দিল্লির স্থানীয় দূষণের ৫১ শতাংশই আসে যানবাহনের নির্গমন থেকে— যা অন্যান্য সমস্ত দূষণের উৎসের মধ্যে সর্বাধিক।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আপনারা জানেন দিল্লিতে দূষণের মাত্রা খুবই বেশি। এই অবস্থায় সরকারের এই পদক্ষেপ পুরনো গাড়ি সরানোর জন্য একদম ঠিক হয়েছে। আরেকজন বলেন, দূষণের কারণে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়, কারণ এটি দিল্লির দূষণ কমাবে। একই সুরে আরও একজন বলেন, সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা একদম সঠিক। যারা এখনও পুরনো গাড়ি ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এদিকে শহরের ৪৯৮টি পেট্রোল পাম্পে বসানো অটোমেটিক নাম্বার প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা এবং পুলিশের সহায়তায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। নিয়ম কার্যকরের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে এই প্রয়োগের ধারাবাহিকতা এবং জনসাধারণের সহযোগিতার উপর। দূষণ কমাতে এই উদ্যোগ আগামী দিনে কতটা কার্যকর হয়, এখন নজর সেদিকেই।