শিলং, ৩০ জুন : মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে রহস্যজনক হত্যা মামলায় বড়সড় সাফল্য পেল রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। ধৃত ব্যবসায়ী শিলোম জেমসের রতলামের বাড়িতে হানা দিয়ে উদ্ধার হয়েছে নিহত রাজা রঘুবংশীর সোনার চেন, তাঁর ও স্ত্রী সোনমের গয়না, ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, রতলামের মঙ্গলমূর্তি কলোনিতে শিলোমের শ্বশুর মনোজ গুপ্তর ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হয়েছে ওই সামগ্রী। বাড়ির রান্নাঘরে রাখা একটি ব্যাগের মধ্যেই মিলেছে সবকিছু। শনিবার গভীর রাতে ইন্দোরের মহালক্ষ্মী নগরের বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে এরপরই পুলিশ রতলামের ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছায়। অভিযানে শিলোমের স্ত্রী ও ভগ্নিপত্নীও উপস্থিত ছিলেন।
মেঘালয় পুলিশের ইস্ট খাসি হিলস জেলার এসপি বিবেক সিয়েম জানিয়েছেন, এসআইটি-এর দুই সাব-ইন্সপেক্টর অ্যান্টনি খংসিত এবং করণ পাচুয়ার নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। অভিযানে আলকাপুরি থানার কর্মীরাও সহযোগিতা করেছেন। উদ্ধার হওয়া সামগ্রীগুলি মামলার তদন্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
রাজা রঘুবংশীর দাদা বিপিন রঘুবংশীকে রবিবার রাতে ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে ডেকে এনে ওই গয়নাগুলির পরিচয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। সঙ্গে সোনমের বিয়ের সময়ের ছবিও আনতে বলা হয়েছিল। যাতে তাঁর গয়নাও শনাক্ত করা যায়।
প্রসঙ্গত, ২৩ মে মেঘালয়ের সোহরার ওয়েইসাডং জলপ্রপাতের কাছে নির্মমভাবে খুন হন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা রাজা রঘুবংশী। তদন্তে উঠে এসেছে, স্ত্রী সোনম এবং তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে ষড়যন্ত্র সাজিয়ে তিনজন বন্ধুকে ভাড়া করে খুন করানো হয় রাজাকে। ৩ হাজার ধাপ নামার পর নংরিয়াতে রাত কাটিয়ে ফেরার পথে ওয়েইসাডংয়ের জঙ্গলে রাজাকে দু’টি দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে দেহ গুম করা হয়।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, খুনিরা গুয়াহাটি থেকে খুনের অস্ত্র কিনে ২১ মে শিলং পৌঁছয়। ২২ মে সোনম ও রাজা স্কুটার ভাড়া করে সোহরা পৌঁছান। পরদিন সকালে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার পরে সোনম ট্যাক্সি করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ৯ জুন উত্তরপ্রদেশ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত রাজ, সোনম, এবং তিন খুনি-সহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে এসআইটি। শিলোম জেমস, বলবীর অহিরওয়ার ও লোকেন্দ্র সিং তোমারকে ২৬ জুন শিলং নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু হয়েছে।
মেঘালয়ের ডিজিপি এল. নোংরাং জানিয়েছেন, ঘটনার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই এতটা শত্রুতা তৈরি হওয়া বিস্ময়কর। সোহরার পর্যটনকেন্দ্রের একান্ত কোণে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডে ধাপে ধাপে সামনে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা প্রমাণ করেছে কৌশলে সাজানো ষড়যন্ত্র।

