‘ডাস্টবিনে ফেলে দেব’: তেজস্বী যাদবের ওয়াকফ আইন মন্তব্যের পর বিজেপির তীব্র প্রতিবাদ, বিহার নির্বাচন জল্পনা

পাটনা, ৩০ জুন : বিহারের বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল-এর নেতা তেজস্বী যাদবের সম্প্রতি করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিজেপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তেজস্বী যাদব দাবি করেছিলেন যে, বিহারে যদি মহাগঠবন্ধন ক্ষমতায় আসে, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করা ওয়াকফ সংশোধনী আইনটি “ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হবে।” এই মন্তব্যের পর, বিজেপি নেতা সুধাংশু ত্রিবেদি এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বরা তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন, যা বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছে।
বিজেপি নেতা ডক্টর সুধাংশু ত্রিবেদি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটা স্পষ্ট যে তেজস্বী যাদব সংসদ ও দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি কোনো সম্মান দেখান না। তার মন্তব্য একদিকে যেমন সংসদের ক্ষমতাকে অপমান করেছে, তেমনি এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধেও একটি খোলামেলা চ্যালেঞ্জ।” তিনি আরও বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক যে, গতকাল পাটনায় তেজস্বী যাদব একটি জনসভায় দাঁড়িয়ে সংসদের পাশ করা একটি আইনকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।”
ত্রিবেদি দাবি করেন যে, তেজস্বী যাদবের এই মন্তব্য ইন্ডিয়া জোটের পুরনো মানসিকতার প্রতিফলন, যা তারা জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পরও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। “এটি পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, এই দলগুলি এখনও সেই পুরনো অভ্যেস থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না যেখানে তারা সংবিধান ও সংসদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়,” বলেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব রবিবার পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘ওয়াকফ বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও’ সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, “বিহারে শাসক এনডিএ সরকার অচিরেই বিদায় নেবে। নতুন সরকার যখন আসবে, তখন আমরা কেন্দ্রের দ্বারা আনা ওয়াকফ সংশোধনী আইনটি ডাস্টবিনে ফেলে দেব।” তেজস্বী যাদব আরও দাবি করেন, এই আইনটি মুসলিম জনগণের প্রতি পক্ষপাতিত্বপূর্ণ এবং তা সমাজের একাংশের স্বার্থে গঠিত।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মন্তব্য, কারণ বিহারের বিধানসভা নির্বাচন আগামী কিছু মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এবং এই ধরনের প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক মহলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
বিহার সরকারের মন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে তেজস্বী যাদবের মন্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য শুধু সংসদ ও সংবিধানের প্রতি অসম্মান নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা। একজন রাজনীতিবিদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।”
পাণ্ডে আরও বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা কীভাবে এমন একটি বক্তব্য দিতে পারেন যেখানে সংসদে পাশ হওয়া একটি আইনকে খারিজ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে? এটা শুধু একটি আইন নয়, বরং এটি দেশের সংবিধান ও তার কাঠামোর প্রতি এক ধরণের অপমান।”
বিহারের আরেক মন্ত্রী প্রেম কুমারও তেজস্বী যাদবের মন্তব্যকে ভুল প্রমাণ করতে অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি একটি অত্যন্ত ভালো পদক্ষেপ। এটি মুসলিম সমাজের গরিব, মহিলা ও বিধবাদের জন্য উপকারে আসবে। এই আইনের মাধ্যমে, কিছু মানুষের হাতে ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এবং এই সম্পত্তির আয় সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।”
তেজস্বী যাদব অবশ্য বিজেপির সমালোচনার বিরুদ্ধে সরাসরি পালটা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়, তাই তারা আমাদের বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। আমরা কখনোই বলিনি যে আমরা সংসদ বা সংবিধানকে অমান্য করব। আমরা শুধুমাত্র সেই আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি যা কিছু পক্ষের স্বার্থে আনা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ওয়াকফ সংশোধনী আইনটি মুসলিমদের জন্য নয়, বরং কিছু বিত্তশালী ও একচেটিয়া ব্যক্তির জন্য কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য হল সমাজের সাধারণ জনগণের জন্য প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করা।”
তেজস্বী যাদবের এই মন্তব্য, যা একদিকে বিজেপির রক্ষণশীল নীতির বিরুদ্ধে এবং অন্যদিকে মুসলিম সমাজের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, বিহারের রাজনৈতিক দৃশ্যে নতুন এক দিক উন্মোচন করেছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এই ধরনের বিবৃতি ও পাল্টা-বিবৃতি বেড়ে চলেছে, যা আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এদিকে, বিজেপি তেজস্বী যাদবের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তার দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ শানাচ্ছে, এবং বিরোধীদের দাবি, এই ধরনের বক্তৃতা শুধুমাত্র ভোটের লাভের জন্য এবং মুসলিম ভোটব্যাংক আকর্ষণের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।