কোহিমা, ২৬ মে: নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি দুই প্রজাতির স্টিংলেস মৌমাছি—Tetragonula iridipennis Smith ও Lepidotrigona arcifera Cockerell—কে অত্যন্ত কার্যকর পরাগবাহক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যারা ফসলের উৎপাদনশীলতা এবং গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে সক্ষম।
এই গবেষণাটি অল ইন্ডিয়া কো-অর্ডিনেটেড রিসার্চ প্রোজেক্ট (AICRP)-এর আওতায় ড. অবিনাশ চৌহান-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে এবং প্রায় এক দশকব্যাপী গবেষণার ফল এটি। গবেষণায় দেখা গেছে, স্টিংলেস মৌমাছি নিয়ন্ত্রিত কৃষি পরিবেশ—যেমন গ্রিনহাউস—এও দক্ষতার সঙ্গে পরাগায়ন ঘটাতে পারে এবং এর পাশাপাশি তারা ঔষধি গুণসম্পন্ন উচ্চমানের মধু উৎপাদন করে, যার বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
ড. চৌহান বলেন, “আমাদের গবেষণার ফলাফল এখন মৌচাষিদের জন্য নিরাপদ ও লাভজনকভাবে স্টিংলেস মৌমাছি পালনকে সম্ভব করে তুলেছে। এতে মৌমাছির মৃত্যুর হার কমে গেছে এবং মধুর বিশুদ্ধতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এতে টেকসই জীবিকা ও অধিক লাভের পথ প্রশস্ত হয়েছে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসিকাম ও কিং চিলি-র ক্ষেত্রে পরাগায়নের ফলে ফল ধরার হার ও গুণমান বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, কিং চিলি-তে ফল ধরার হার বেড়ে ২১% থেকে ২৯.৪৬% হয়েছে। Capsicum annuum-এ ফলের গঠন ও স্বাস্থ্য ৭% এর বেশি উন্নতি পেয়েছে, এবং বীজের ওজন বেড়েছে ৬০.৭৪%, যা বীজের জীবন্ততা নির্দেশ করে।
গবেষণায় টমেটো, শসা, জলকুমড়ো, তরমুজ, কুমড়ো, বেগুন, ড্রাগন ফল এবং সাইট্রাস ফলের ক্ষেত্রেও স্টিংলেস মৌমাছির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া, আম, পেয়ারা, আমলকি, ভারতীয় বরই ও রুস প্রজাতির ফল গাছে পরাগবাহকের গুরুত্ব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষণার আওতায় প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে স্টিংলেস মৌমাছির কলোনি সংগ্রহ ও গুণগত উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন শুরু হয়েছে। কুইন সেল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ডোমেস্টিকেশন ও গুণগত বংশবৃদ্ধি এখন নাগাল্যান্ড ছাড়াও মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে।
যদিও ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে স্টিংলেস মৌমাছি পালন এখনও সীমিত, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে পारম্পরিক হোমস্টেড এপিয়ারি পদ্ধতিতে এই চাষ আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। গত এক দশকে এর বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে।
গবেষণা দল ভবিষ্যতে প্যাশন ফ্রুট, সোলানাম প্রজাতি ও চাউ-চাউয়ের মতো অপ্রচলিত কিন্তু ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফসল নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি, মধু সংগ্রহের কৌশল উন্নয়ন ও মেলিসোপ্যালিনোলজিক্যাল স্টাডির মাধ্যমে মধুর ঔষধি গুণাগুণ বোঝার দিকেও গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ কৃষি উদ্ভাবনের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব পরাগবাহক সংরক্ষণের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গবেষকরা Apis dorsata, Apis florea, halictid মৌমাছি, syrphid মাছি এবং Amegiella মৌমাছির সংরক্ষণের ওপরও জোর দিয়েছেন।
এই গবেষণা ভারতের কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে—বিশেষ করে দূরবর্তী ও পাহাড়ি অঞ্চলে টেকসই কৃষিকাজে স্টিংলেস মৌমাছির ব্যবহার বাড়ানো যাবে বলে আশাবাদী গবেষক মহল।
2025-05-26

