মুম্বই, ১২ মে : শরদ পওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপি-এসপি দলের বিধায়ক জিতেন্দ্র আওয়াদ ও রোহিত পওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পৃথক পোস্টে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে বলার ইন্দিরা গান্ধীর অবস্থানকে তুলে ধরে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণারও কটাক্ষ করেছেন।
এনসিপি-এসপি দলের পরিষদীয় নেতা জিতেন্দ্র আওয়াদ এক্স-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি পুরনো সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, “ইন্দিরা গান্ধী সেই নেত্রী, যিনি আমেরিকাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের নীতি নিজেরাই ঠিক করব। অহেতুক হস্তক্ষেপ করবেন না।’ তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছিলেন।”
এনসিপি-এসপি বিধায়ক রোহিত পওয়ার তাঁর পোস্টে বিস্তারিত তুলে ধরেন ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের ভূমিকা। তিনি লেখেন, “১৯৭১ সালে, পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক হিংসা শুরু হয় এবং প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেন।”
তিনি আরও লেখেন, “তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সপ্তম নৌবহর পাঠান বঙ্গোপসাগরে, পাকিস্তানকে সমর্থনের জন্য। এটি ছিল ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার একটি চেষ্টা। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী সেই চাপের কাছে নত না হয়ে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারকে সাফ জানিয়ে দেন যে, ‘আপনারা যদি পাকিস্তানকে থামাতে না পারেন, তবে ভারত নিজে ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি সেনাপ্রধান স্যাম ম্যানেকশকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।”
“৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ পাকিস্তান ভারতের উপর বিমান হামলা চালালে ভারতও পাল্টা যুদ্ধ ঘোষণা করে। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যেই ভারতীয় সেনা পূর্ব পাকিস্তানে নির্ণায়ক বিজয় অর্জন করে এবং ১৬ ডিসেম্বর ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।” রোহিত পওয়ার আরও বলেন, “ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন শুধুমাত্র পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়ার পর। তাই আজও তাঁকে ‘আয়রন লেডি’ বলা হয়।”
রোহিত পওয়ার তাঁর পোস্টে আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “তৎকালীন বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ীও ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মান করে ‘দুর্গা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এটাই ছিল সেই সময়, যখন শাসক ও বিরোধীপক্ষ একে অপরের মহত্ব স্বীকার করতেন এবং কোনো বিশ্বশক্তির সামনে মাথা নত করতেন না।”

